শীতে শাকের পুষ্টিগুণ
শীতকালে নানা রকম শাকসবজির সমারোহ দেখা যায়। বিভিন্ন মওসুমে বিভিন্ন রোগবালাই দেখা যায়, কিন্তু আল্লাহ্ মানুষের মঙ্গল চান। তাই বিভিন্ন মওসুমি রোগবালাইয়ের মোকাবেলায় নানা প্রকার শাকসবজি দেন, যা খেলে ওইসব মওসুমি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। আসুন, জেনে নিই কোন শাকসবজিতে কী গুণ রয়েছে। প্রথমে শাকের কথাই বলি।
পালংশাক : বলা হয় শাকের রাজা পালং। কারণ, পালংশাক অনেক রোগ সারায়। কিডনি ও লিভারের জন্য পালংশাক অত্যন্ত উপকারী। ফুসফুসের জন্যও পালংশাক উপকারী। সর্বপ্রকার পেটের অসুখে পালংশাক উত্তম। এতে লোহা ও তামা রয়েছে। এটি শক্তিবর্ধক। জন্ডিস রোগেও পালংশাক উপকারী। রক্ত পরিষ্কারক। জীবনী শক্তিবর্ধক। পিত্ত ও কফের জন্যও ভালো। ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী। এতে ভিটামিন ‘এ, ‘বি’, ‘সি’ ও ‘ই’ রয়েছে।
লাল শাক : খেতে সুস্বাদু লাল শাকে যে কতো রকমের স্বাস্থ্যগুণ লুকিয়ে আছে তা হয়তো অনেকেই জানেন না। আমাদের দেহের সুস্থতার জন্য লাল শাকের গুরুত্ব অনেক বেশি। লাল শাক ভাজি বা ছোট মাছ দিয়ে ঝোল খেতে অনেকেই ভালোবাসে। দেহের রক্তশূন্যতা রোধ করতে লাল শাক খুব উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন। লাল শাক দিয়ে জুস বানিয়েও খেতে পারেন। কিডনি ফাংশনগুলো ভালো ও পরিষ্কার রাখতে লাল শাক খাওয়া ভালো। এছাড়া যারা নতুন মা হয়েছেন, তাদের জন্যও লাল শাক খুব কার্যকরী। লাল শাকে আছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির করে। চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও লাল শাক ভালো। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং মিনারেল ও পুষ্টি যোগায়। লাল শাক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এর বিটা ক্যারোটিন হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও বহু গুণাগুণ রয়েছে লাল শাকে।
গিমা শাক বা ডেমি শাক: গিমা শাক আগাছার মতো জন্মায়। গিমা লতানো বিশিষ্ট শাক। এটি অজীর্ণ, জন্ডিস, জ্বর, পিত্ত, কফে উপকারী। তিতা বলে মুখের অরুচি চলে যায়। এই জংলী শাকটি ডায়াবেটিকে উপকারী। হারবাল চিকিৎসার ক্ষেত্রে মূলত রিউমেটিকের ব্যাথা ও সোরিয়াসিস হারবাল ওষুধ তৈরির কাজে এর কাণ্ড, পাতা, ফুল সবই কাজে লাগে। কোস্টকাঠিন্য, পাকস্থলি ও অন্ত্রের সমস্যা, রক্তপ্রবাহে সমস্যা, অ্যাজমা, ফুসফুস সংক্রান্ত রোগ, ভিটামিন সি এর অভাব জনিত স্কিন ডিজিজ যেমন স্কার্ভি, চুলকানি, মাংসপেশি ও হাড়ের ব্যথার জন্য গিমা শাক খুবই উপকারী। গিমা শাক খেলে অ্যাসিডিটি ও গ্যাসের প্রকোপ কমে। এছাড়া গিমা শাক ওজন কমাতেও খুবই কার্যকরী। দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে গিমা শাক দারুণ উপকারী।
পাটশাক: সোনালি আঁশ হিসেবে পরিচিত অর্থকরী ফসল পাট। কিন্তু এর পাতা বা পাটশাকেরও গুরুত্ব কম নয়। অধিকাংশ মানুষের পছন্দের দেশি বিভিন্ন শাকের তালিকায় প্রথম দিকেই থাকে পাটশাক। পাটশাক খেতে হালকা তিতা স্বাদের হলেও তোষা বা বগী পাটশাক খেতে দারুণ। পাটশাকে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি। এছাড়া রয়েছে শর্করা, আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি–সহ প্রচুর খাদ্যশক্তি। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কমপক্ষে ৭৫০ মাইক্রোগ্রাম এবং শিশুদের ২৫০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ প্রয়োজন, যা অনায়াসেই পাটশাক থেকে পাওয়া সম্ভব।
কচুশাক: আমাদের দেশের অতিপরিচিত ও জনপ্রিয় একটি শাকের নাম কচুশাক। গ্রামাঞ্চলে পতিত জমিতেই দেখতে পাওয়া যায় এই গাছ। কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ। এ ছাড়া রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন। সংগত কারণেই আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা ভিটামিন এ–র অন্যতম উৎস হিসেবে রাতকানা রোগসহ এই ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন রোগ থেকেও মুক্তি দিতে পারে কচুশাক।
গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য দারুণ উপকারী এই শাক হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া রক্তস্বল্পতা সমস্যার সমাধান, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি এবং শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ চলমান রাখতে এবং দাঁত ও হাড় ভালো রাখতে কচুশাক বেশ কার্যকর। কচুশাক ভর্তা এবং তরকারি হিসেবে দারুণ সুস্বাদু।
কলমি শাক: কলমি শাক হচ্ছে গ্রামবাংলার অতি সাধারণ শাক। এর রয়েছে দুর্দান্ত উপকারিতা। কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। তাই সর্দি-কাশির সমস্যা থাকলে খেতে পারেন। তবে খুব বেশি সময় ধরে রান্না না করাই ভালো। কলমি শাক ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস। তাই শিশুদের জন্য এটি বেশ উপকারী। তাছাড়া যে কোনও বয়সেই শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করতে পারে এই শাক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের কিডনির সমস্যা, দুর্বল হজম শক্তি, ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা, কিডনির রোগ আছে তাদের কলমি শাক খাওয়া উচিত নয়।