রংপুর মেডিকেল কলেজ বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৬ জন রোগী 

শীত থেকে রক্ষা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মুন্নী আক্তার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। মা শরিফা আক্তার তার দেখভাল করছেন ।

শীত আসতেই রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। শীত থেকে রক্ষা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে তাঁরা দগ্ধ হন। সাধারণত কাপড়, শাড়ি বা পোশাকে আগুন লেগে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রতিবছরের মতো এবারও আগুন পোহাতে গিয়ে ১০ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাঁরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অথচ একটু সচেতন ও সতর্ক হলেই এ দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। 

বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক আবদুল হামিদ বলেন, ‘শীতের শুরুতে রংপুর অঞ্চলে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে মানুষ অগ্নিদগ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মারা যান। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে শীতের সময় গ্রামপর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক কাজ করা উচিত। আমি মনে করি, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকযোগে প্রচারণা করা হলে মানুষেরা আগুন পোহানোর সময় সতর্ক থাকতেন।’

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সূত্রে জানা গেছে, গত বছর শীতে জানুয়ারির মধ্যভাগ থেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে অগ্নিদগ্ধের খবর ছিল অনেক বেশি। মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৭। তবে দগ্ধ রোগীর সংখ্যা ছিল ৭০।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ২৬ জন দগ্ধ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ  হয়েছেন ১০ জন। এ ছাড়া চুলায় রান্না ও গরম পানি বহন করতে ১৬ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের সবার শরীর ১০ থেকে ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। গত ১৫ দিনে তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

রংপুর সদরের জানকী ধাপেরহাট এলাকার বাসিন্দা বাবলি বেগম (৪৫)। কনকনে শীতে বাড়ির উঠানে গতকাল শুক্রবার সকালে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে পরনের কাপড়ে আগুন লেগে যায়। স্থানীয়ভাবে শরীরের আগুন নেভানো হলেও ততক্ষণে শরীরের কিছু অংশ আগুনে দগ্ধ হয়। তাঁকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁর কোমরের নিচ থেকে ১৫ ভাগ দগ্ধ হয়েছে।

হাসপাতালে বাবলির সঙ্গে মেয়ে খাদিজা আকতার এসেছেন। তিনি বলেন, শীত থেকে বাঁচতে বাড়ির উঠানে আগুন পোহাতে গেলে তাঁর মায়ের পেছনে শাড়ির মধ্যে আগুন লেগে যায়। প্রথমে তাঁর মা আগুন লাগার বিষয়টি বুঝতেই পারেননি। পাশ থেকে একজন চিৎকার করতে থাকেন, এরই মধ্যে শরীর ঝলসে গেছে। এখন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নড়াচড়া করতে পারছেন না। মায়ের এ অবস্থা দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে তাঁর।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় শীতে আগুন পোহাতে দগ্ধ হয়ে ভর্তি হয়েছেন ফাতেমা বেগম (৬২)। হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে থাকা ছেলে নজরুল ইসলাম বলেন, গতকাল সকালে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে অসাবধানবশত পরনের কাপড়ে আগুন লেগে যায়। শরীরে নিচের দিকের অংশ প্রায় ২০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। এরপর দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

দিনাজপুরের খানসামা এলাকার কিশোরী রশিদা খাতুন (১৪) আট দিন আগে বাড়ির উঠানে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়। মেয়ের সঙ্গে এসেছেন মা নাসিমা আক্তার। তিনি জানালেন, ‘মেয়েকে দেখে খুব কষ্ট লাগছে। বিছানার এপাশ-ওপাশ হতে পারে না।’

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার কিশোরী মুন্নী আক্তার (১৩) শীত থেকে উষ্ণতা পেতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে অসাবধানবশত পায়জামায় আগুন লেগে গেলে কোমরের নিচের অংশ আগুনে দগ্ধ হয়। তার সঙ্গে থাকা মা শরিফা আক্তার বলেন, ‘মেয়ের কষ্টে বুকটা হাঁসফাঁস করে। কী যে হবে জানি না।’

হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের দায়িত্বে নিয়োজিত চিকিৎসক আবদুল হামিদ বলেন, প্রতিবছরই শীত মৌসুমে আগুন পোহাতে গিয়ে হাসপাতালে আগুনে দগ্ধ রোগী ভর্তি হন। তবে তুলনামূলকভাবে এখন পর্যন্ত এবছর কিছুটা কম রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১ জানুয়ারি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আফরোজ বেগম (৪০) নামের একজন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তিনি আরও বলেন, ভর্তি হওয়া রোগীদের পুরোদমে সেরে উঠতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। শরীরের ক্ষত থেকে যাবে। এরপরও তাঁদের সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.