উখিয়ায় গুলি করে আরও এক রোহিঙ্গা মাঝির হত্যা
গুলি । প্রতীকী ছবি
কক্সবাজারের উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে একের পর একে রোহিঙ্গা মাঝিকে (নেতা) হত্যার ঘটনা ঘটছে। শনিবার দিবাগত রাতেও উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিমে) অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে মোহাম্মদ সেলিম (৩৫) নামের আরও এক রোহিঙ্গা মাঝিকে।
মোহাম্মদ সেলিম আশ্রয়শিবিরের বি-ব্লকের আবদুস সোবহানের ছেলে। তিনি বি-ব্লকের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিচালনার ব্যবস্থাপনা কমিটির উপমাঝি (নেতা) ছিলেন।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, সেলিমকে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই সেলিম মারা যান। সকাল ১০টার দিকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, হামলাকারীরা মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সন্ত্রাসী। মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় আরসার সন্ত্রাসীরা মাঝি মোহাম্মদ সেলিমসহ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, চার মাস ধরে উখিয়ার একাধিক আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ২৪ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১১ রোহিঙ্গা মাঝি ও ৫ জন আরসার সদস্য। অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।
বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮) রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জাফর বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ন্ত্রণ করে আড়াই হাজারের বেশি মাঝি ও সাব মাঝি। দুই হাজারের মতো মাঝি আরসাবিরোধী। মাঝিদের কেউ কেউ মাদক চোরাচালানের অন্যতম হোতা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনী নবী হোসেন গ্রুপের প্রধান নবী হোসেনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। এমন অভিযোগে আরসার সন্ত্রাসীরা মাঝিদের হত্যার মিশনে নেমেছে। প্রায় প্রতিদিন আরসা সন্ত্রাসীরা ঘরে ঢুকে মাঝিদের অপহরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এতে সাধারণ রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীন অবস্থায় জীবন যাপন করছে।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত আটটার দিকে উখিয়ার জামতলী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৫) এ–ব্লকের হেড মাঝি রশিদ আহমদকে (৩৬) ঘরে ঢুকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা। রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি, মুখোশধারীরা আরসার সন্ত্রাসী।
এদিকে ৬ জানুয়ারি বেলা দেড়টায় উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) আরসা সন্ত্রাসীদের হামলায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন গ্রুপের সন্ত্রাসী মোহাম্মদ নবী (৪০) গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ওই আশ্রয়শিবিরের বি-৩৯ ব্লকের মোহাম্মদ হাশিমের ছেলে। পুলিশের তত্ত্বাবধানে মোহাম্মদ নবীর চিকিৎসা চলছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে।
পুলিশ জানায়, ওই দিন বিকেলে মোহাম্মদ নবীর বসতিতে অভিযান চালিয়ে অত্যাধুনিক একটি হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার করে এপিবিএন। রোহিঙ্গা বসতিতে এ গ্রেনেড কীভাবে এল, তা নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।