গোলাগুলিতে দুই রোহিঙ্গা নিহতের ঘটনার মামলায় আসামি আরসাপ্রধানসহ ৭৮ জন

কক্সবাজারের উখিয়ায় একটি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির । ফাইল ছবি

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) গোলাগুলিতে দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নিহতের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে উখিয়া থানায় হওয়া মামলায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার (আরাকান স্যালভেশন আর্মি) প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিসহ ৭৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৪৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, মাদক কারবার নিয়ে আরসার প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহর সঙ্গে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী গ্রুপের প্রধান নবী হোসেনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এর জের ধরে গত শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) একজন রোহিঙ্গা মাঝিকে (নেতা) অপহরণ করতে গিয়েছিলেন আরসা সদস্যরা। এ সময় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যদের গোলাগুলিতে দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সলিম উল্লাহ (৩৩) ও রেদোয়ান (২৬) নিহত হন।

আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএনের মুখপাত্র ও সহাকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন ও মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অস্ত্র, হত্যা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা তিনটি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের নাম-ঠিকানা শনাক্ত করতে বিলম্ব হওয়ায় মামলা করতে কিছুটা সময় লেগেছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে এপিবিএন। বিকেলে দুই আসামিকে উখিয়া থানা-পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৩) সি ব্লকের নজির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ সালাম ওরফে ডেভিড নজির (২১) ও ক্যাম্প-৮ আশ্রয়শিবিরের বি ব্লকের বাসিন্দা নুর বশরের ছেলে মোহাম্মদ জোবায়ের (২১)। হত্যা ও পুলিশের ওপর হামলা মামলার এই দুজনকে ১ ও ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে আরসার প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিকে (৪৮)। তাঁর ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু কোনারপাড়া মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায়।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, মাদকের ব্যবসা নিয়ে আশ্রয়শিবিরে দুটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধের জের ধরে খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাতেও এক পক্ষ আরেক পক্ষের একজন মাঝিকে (রোহিঙ্গা নেতা) অপহরণ করতে গেলে এপিবিএনের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তাতে পুলিশের তালিকাভুক্ত দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সলিম উল্লাহ ও রিদোয়ান ঘটনাস্থলে নিহত হন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত শুক্রবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) বি-৬২ ব্লক ও বি-৪৯ ব্লকের মাঝামাঝি এলাকায় একজন রোহিঙ্গা মাঝিকে অপহরণ করতে যায় ৪০-৪৫ জনের একটি অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী দল। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়তে থাকে। আত্মরক্ষার্থে এপিবিএন সদস্যরাও গুলি ছোড়েন। একপর্যায়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা পাশের জঙ্গলে আত্মগোপন করলে ঘটনাস্থল থেকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী দলের দুই সদস্য সলিম উল্লাহ ও রেদোয়ানের লাশ পাওয়া যায়। লাশের পাশে দেশে তৈরি ১টি বন্দুক, ১টি ম্যাগাজিন ও ৭৩টি গুলি পাওয়া যায়। সংঘর্ষের সময় এপিবিএন ৭৩টি এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ১০০-১৫০টি গুলি ছোড়ে। গুলিতে এপিবিএনের তিন সদস্য কনস্টেবল সরওয়ার কামাল, ইফতেখার উদ্দিন ও মো. মহিদুল আলম আহত হন। উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী বলেন, এপিবিএনের সঙ্গে গোলাগুলিতে অংশ নেওয়া অনেক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সন্ধ্যার পর ক্যাম্পে এসে ঘোরাফেরা করেছেন। এতে রোহিঙ্গা নারীসহ অনেকেই ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। রোহিঙ্গা নেতা ও আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দাদের দাবি, মাদক ব্যবসার টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আশ্রয়শিবিরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বেড়েই চলছে। এসবের জেরে গত ৪ মাসে কুপিয়ে এবং গুলি করে অন্তত ১২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন নবী হোসেন গ্রুপের সদস্য।

বালুখালী আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা কলিম উল্লাহ বলেন, কয়েক দিন ধরে সন্ধ্যার পর আশ্রয়শিবিরে ‘ভুতুড়ে’ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা আশ্রয়শিবিরের ঘরে ঘরে গিয়ে চাঁদাবাজি করে। অন্যথায় সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গা নারীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.