৬ দিন পর চট্টগ্রামের সেই চিনি মিলের আগুন নির্বাপণ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর এলাকার চিনি মিলের আগুন নির্বাপণ করেছে ফায়ার সার্ভিস। আগুন লাগার ৬ দিন পর শনিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ করা হয়।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের (চট্টগ্রাম) উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ৪ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে কর্ণফুলীর ইছাপুর এলাকার চিনি মিলে আগুন লাগে। ওই চিনি মিলে ৬টি গোডাউন ছিল। এর মধ্যে একটি গোডাউনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।

অগ্নিকাণ্ডের প্রথমদিন রাতে সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। ওই সময় ফায়ার সার্ভিসের ১৪ ইউনিট কাজ করে। তাতে মূল কারখানা ও অন্য গুদামগুলোতে আগুন ছড়ানো ঠেকানো যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও মিলের ভেতরে আগুন নেভানো যায়নি। পরে নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের শতাধিক সদস্য ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নির্বাপণ কাজে সহযোগিতা করে।

শনিবার সন্ধ্যায় সম্পূর্ণভাবে আগুন নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। এই সময় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের (চট্টগ্রাম) উপ-পরিচালক দিনমনি শর্মা বলেন, অপরিশোধিত চিনিগুলো দাহ্য পদার্থ হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়েছে। অন্য গোডাউনে যাতে আগুন ছড়িয়ে না পড়ে সেটি নিয়ে আমরা সতর্ক অবস্থানে ছিলাম। রোবট ফায়ার ফাইটার, ফোম, কেমিক্যাল ব্যবহারসহ বিভিন্ন চেষ্টায় আগুন নির্বাপণ করতে সক্ষম হয়েছি।

মিলের কর্মকর্তারা বলছেন, রোজার মাস সামনে রেখে মিলের চারটি গুদামে মোট চার লাখ টন অপরিশোধিত চিনি মজুত করা হয়েছিল। পরিশোধনের পর ওই চিনি বাজারে যাওয়ার কথা। এর মধ্যে ১ নম্বর গুদামের এক লাখ টন চিনি পুড়ে গেছে। এক নম্বর গুদামটি ৬৫ হাজার ৭০০ বর্গফুটের। উচ্চতা পাঁচ তলা ভবনের সমান। সেখানে বোঝাই করা ছিল অপরিশোধিত চিনি। অপরিশোধিত চিনি আগুনে গলে লালচে কালো কাদার মতো তরল কর্ণফুলীতে গিয়ে দূষণ ঘটাতে শুরু করেছে।

পোড়া চিনি ও কেমিক্যালের বর্জ্য মিশে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যাওয়ায় ৫ মার্চ থেকেই নদীর দুই তীরে ভেসে উঠতে শুরু করেছে মাছ ও জলজ প্রাণী। ওই বর্জ্য যেন আর নদীতে না যায়, তা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, চিনির দাহ্য পদার্থ যখন ৩৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকে তখন বিষাক্ত কেমিক্যালে রূপ নেয়। আর সেখানে পানি ছাড়া হলে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন কার্বন তৈরি হয়। যার কারণে কারখানায় আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। সেই আগুনে অপরিশোধিত চিনি গলে এর লাভা নদীতে এসে পড়েছে। এতেই পানি দূষিত হয়ে মাছ মরছে। চিনির কেমিক্যালে নদী দূষণ তো হয়েছেই; এছাড়া নদী দূষণের অন্যতম কারণ হলো ১৭টি খালের বর্জ্য ওই নদীতে এসে পড়ছে।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.