সৌদিতে আগুনে পুড়ে ৪ বাংলাদেশি নিহত, ৩ জনের বাড়ি নওগাঁয়

সৌদি আরবের রিয়াদের মুসাসানাইয়া এলাকায় একটি সোফা তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে চার বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের বাড়িই নওগাঁর আত্রাই উপজেলায়।

স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৫টা নাগাদ আগুনে পুড়ে নিহত হওয়ার এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা। ওই খবর পাওয়ার পর থেকে এই তিনজনের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

নিহতদের মধ্যে আত্রাই উপজেলার বাসিন্দা। তারা হলেন- তেজনন্দি গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে ফারুক হোসেন, দিঘা স্কুলপাড়া গ্রামের কবেজ আলীর ছেলে শুকবর রহমান ও শিকারপুর গ্রামের সাহাদ আলীর ছেলে এনামুল হোসেন।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকেলে তেজনন্দি গ্রামের ফারুক হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের লোকজন, পাড়া প্রতিবেশি এবং আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাঙ্খীরা ভিড় করে আছেন। গ্রাম জুড়েই যেন কান্না আর শোকের রোল পরে গেছে। ফারুকের স্ত্রী-দুই সন্তানকে যেন কেউ থামাতেই পারছেন না। বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পরছেন।

ফারুকের ভাতিজা পিন্টু আলী জানান, চাচা ফারুক হোসেন গার্মেন্টসে কাজ করতেন। গত প্রায় ৬ বছর আগে ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। কিন্তু যাবার পর থেকেই সেখানে নানা সমস্যার মধ্যে পরে যায়। গত প্রায় ৮মাস হচ্ছে স্থায়ীভাবে সোফা তৈরির কারখানায় কাজে যোগদান করেছেন। এরই মধ্যে বুধবার (৩ জুলাই) রাত ১০টা নাগাদ মোবাইল ফোনে জানতে পারেন কারখানায় আগুনে ফারুক নিহত হয়েছেন।

উপজেলার দিঘা গ্রামের নিহত শুকবর আলীর জামাই বিদ্যুত হোসেন বলেন, তার শ্বশুড় কৃষি শ্রমিক ছিলেন। গত আড়াই বছর আগে একমাত্র সম্বল ১১শতক জায়গা বিক্রি করে তার সাথে ধার-দেনার টাকায় সৌদি আরবে যান। এখন পর্যন্ত ধার-দেনার টাকা শোধ করতে পারেননি।

শুকবরের দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে বড় ছেলে শামিম হোসেন প্রতিবন্ধী। তার মাথা গোঁজার একমাত্র বাড়ির তিন শতক জায়গা ছাড়া আর কোন জমি নেই। কিভাবে শাশুড়ি, শ্যালকদের নিয়ে চলবেন তা নিয়ে ঘোর বিপাকে পরেছেন। শশুর শুকবর আলীই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

শিকারপুর গ্রামের নিহত যুবক এনামুলের চাচা জাহিদুল ইসলাম জানান, এনামুল গার্মেন্টস শ্রমিক ছিলেন। অনেকটা সুখের আশায় ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। সেখান থেকে কেবলমাত্র রোজগারের টাকায় ধার-দেনা শোধ করে ইটের বাড়ি নির্মাণ করছেন। বাড়ির কাজ শেষ হলে আগামী বছর নাগাদ দেশে এসে বিয়ে করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা তার ভাগ্যে সইলো না। বুধবার রাত অনুমান সাড়ে ১০টা নাগাদ আগুনে পুরে মারা যাবার খবর আসে। তখন থেকেই একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে বাবা-মা পাথর হয়ে পড়েছেন। কিছুতেই যেন তাদের থামানো যাচ্ছে না।

নিহতদের তিন পরিবার থেকেই দ্রুত মরদেহ দেশে আনতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, সৌদি আরবে আগুনে পুড়ে তিনজন নিহতের খবর পেয়েছি। তাদের পরিবারের খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। এছাড়া নিহতদের মরদেহ দেশে ফেরাতে এবং সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা থাকলে তা সহায়তা করতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.