বিশ্বকাপ ফাইনালের রাতে খুলনায় থাকছে ভূরিভোজের বিশাল আয়োজন
আজ বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল উপলক্ষে খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে বড় পর্দায় ফ্রান্স বনাম আর্জেন্টিনার খেলা দেখানো হবে। আছে হাজারো মানুষকে খাওয়ানোর আয়োজন । ছবি: বেলা অবেলা
বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ মাঠে গড়াচ্ছে আজ রোববার। তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জয়ের আশায় মুখোমুখি ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা। ফাইনাল খেলা দেখা নিয়ে খুলনায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা। ব্রাজিল আসর থেকে বেশ আগে বিদায় নিলেও তাদের সমর্থকদের মধ্যেও আছে উন্মাদনা।
খুলনার রাস্তায় চলাফেলা করা মানুষের বড় একটা অংশের পরনেই প্রিয় দলের জার্সি। জার্সি পরে কাজে যাচ্ছেন, ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মোড়ে মোড়ে, দোকানে দোকানে আলোচনায় শুধুই ফুটবল।
শহরে ফাইনাল খেলা দেখার সবচেয়ে বড় আয়োজন হচ্ছে শহীদ হাদিস পার্কে। অবশ্য বিশ্বকাপের শুরু থেকেই এক মাসের জন্য পার্ক ভাড়া নেওয়া ছিল। বিশ্বকাপের পুরোটা সময় মানুষ এখানে খেলা উপভোগ করেছেন। আজও সাত-আট হাজার লোক খেলা দেখবেন। পার্কের গেট দিয়ে সন্ধ্যা সাতটা থেকে প্রবেশ শুরু হবে। হাজার পাঁচেক লোকের খাওয়ার আয়োজন থাকছে। মেনুতে মোরগ পোলাও। খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এবং খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল হাদিস পার্কে বসে খেলা উপভোগ করবেন। খুলনা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম ব্যক্তি উদ্যোগে এই আয়োজন করেছেন।
সাইফুল ইসলাম বেলা অবেলাকে বলেন, খুলনার মানুষ খেলা পাগল। মানুষের খেলা দেখার একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরির করার জন্য এই উদ্যোগটা নেওয়া।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকেই হাদিস পার্কের বিপরীত দিকের একটি ভবনের নিচতলায় পাঁচ হাজার মানুষের খাবার রান্নার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আজ সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, উৎসবমুখর পরিবেশে বড় বড় ডেকে রান্না চলছে। সমর্থকদের অনেকেই বিষয়টা তদারক করছেন। আয়োজক সাইফুল ইসলাম আর্জেন্টিনার পাঁড় সমর্থক। তিনি মনে করেন, এবার মেসির হাতেই শিরোপা উঠবে।
শহরের বিভিন্ন মোড়ে বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজনের পাশাপাশি প্রায় সব জায়গাতেই খাওয়াদাওয়ার আয়োজন থাকছে। অনেক জায়গায় আবার আয়োজনটা আর্জেন্টিনা শিরোপা জেতার পর হবে। শহরের বাস্তুহারা কাঁচাবাজারে বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন করেছে আর্জেন্টিনার সমর্থক গোষ্ঠী। তবে আজ তারা অন্য কোনো আয়োজন করছে না।
আর্জেন্টিনার সমর্থক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একজন ব্যবস্থাপক শেখ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের খাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা আজ খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা রাখিনি। গতকাল আয়োজন ছিল। জিতলে বড় আয়োজন হবে। আজ কম করে ২০০ লোক খেলা দেখব। এর মধ্যে ব্রাজিলের সমর্থকেরাও থাকবেন। ব্রাজিল তো না থেকেও আছে। আজ তাঁরা ফ্রাজিল, মানে ফ্রান্সকে সমর্থন দেবেন।’
তবে ব্রাজিলের সমর্থকেরা আজ এক জায়গায় দলবদ্ধ হয়ে খেলা দেখবেন না বলে জানিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিজীবী ব্রাজিল সমর্থক শাহীন আলম। ব্রাজিলের এই কট্টর সমর্থক বলেন, ‘ব্রাজিলের সমর্থকেরা আজকে হয়তো দল বেঁধে খেলা দেখবেন না। যাঁর যাঁর মতোই খেলাটা উপভোগ করবেন। আর ৩৬ বছর পর আরেকটা বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্জেন্টিনা। এ জন্য তাদের সমর্থকদের মধ্যে উন্মাদনাটা অনেক বেশি। এবারের বিশ্বকাপের প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই পেনাল্টি পেয়ে গেছে দলটি। যা–ই হোক, আজকে চাই, ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তি মেসির হাতে কাপটা উঠুক।’
ব্রাজিলের অন্য একজন সমর্থক আকাশ মণ্ডল বলেন, ‘মেসি কাপটা পেলে ভালো লাগত। তবে আর্জেন্টিনা কাপ জিতলে তাদের সমর্থকদের কথার তোড়ে টিকে থাকা দায় হবে। এ জন্য ফ্রান্সকেই সমর্থন দিতে হচ্ছে।’
শুধু শহর নয়, গ্রামগঞ্জেও ফাইনাল খেলা দেখার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন সমর্থকেরা। দাকোপ উপজেলা আর্জেন্টাইন সমর্থক গোষ্ঠীর একজন সমন্বয়ক আজগর হোসেন বলেন, আর্জেন্টিনার সমর্থক গোষ্ঠী উপজেলা সদরের চালনা মোহাম্মদ আলী স্কুল মাঠ থেকে আজ বিকেলে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। উপজেলা সদরে অন্তত ১৫ জায়গায় বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবখানেই খাওয়াদাওয়ার আয়োজন থাকছে।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফাইনাল খেলা দেখার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা। সেখানেও মোড়ে মোড়ে চলছে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন। উপজেলার পানিগাতী সাদেকের মোড় এলাকার আর্জেন্টিনার একজন সমর্থক আবদুল্লাহ বলেন, বিশ্বকাপের শুরু থেকেই আর্জেন্টিনার খেলার দিন তাঁরা খাওয়ার আয়োজন করে থাকেন। সবাই মিলে চাঁদা তুলে বেশ বড়সড়ো আয়োজন করে থাকেন তাঁরা। ফাইনালের জন্য বড় পর্দায় খেলা দেখার পাশাপাশি খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা তো থাকছেই। আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতলে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনেরও চিন্তা করেছেন তাঁরা। তাঁর ভাষায়, ‘বিশ্বকাপের মঞ্চে মেসি ভাগ্যহীন রাজা। এর আগে চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। কিন্তু একবারও সেরার শিরোপা ওঠেনি তাঁর হাতে। এবার শিরোপাটা মেসির হাতেই উঠুক।’