ট্রেনের বগিতে ঘুরে এক টুকরা একাত্তর

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর ঘুরে দেখছে দর্শনার্থীরা । ছবি: বেলা অবেলা

৯ বছরের শিশু আমেন খাতুন কানে হেডফোন দিয়ে শুনছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আর ডিজিটাল মনিটরে দেখছে সেগুলোর ছবি। ১৯৬৯ সালের ১৩ জুন শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা একটি চিঠি পড়ছিল বিজয় ঘোষ নামের এক কলেজছাত্র। রাজশাহী রেলস্টেশনে রাখা ট্রেনের একটি বগির দৃশ্য এগুলো।

এই বগিতে ৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ধারাবাহিক সংগ্রামের ইতিহাস ডিজিটাল মনিটরে স্থিরচিত্র ও ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে দেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’। এই ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরটি এখন আছে রাজশাহীতে। বিভিন্ন বয়সী মানুষ ভিড় করছে এই জাদুঘরটি দেখতে।

রাজশাহী রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের যাত্রীরা ট্রেনের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এই জাদুঘরের ঘোষণাও শুনতে পাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরপর এই ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। জাদুঘরটি রাখা হয়েছে স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত খোলা থাকে, আবার বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা ঘুরে দেখতে পারেন। কোনো দর্শনী ছাড়াই এই জাদুঘর ঘুরে দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ওপর চিত্রিত ম্যুরালের মাধ্যমে বগিটি সাজানো হয়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল ভার্চ্যুয়ালি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন। গত ১ আগস্ট গোপালগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে ব্রডগেজ জাদুঘরটি প্রদর্শনের জন্য উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম। আর চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে মিটারগেজ জাদুঘরটি প্রদর্শনের জন্য উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

বগির এক প্রান্তে বড় এলইডি মনিটরে ৭ মার্চের ভাষণসহ বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ, থিম সং ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গান প্রচারিত হয়। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটিতে জয় বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা হয়েছে একটি বুক শেলফ। যেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর রচিত ৬২টি বই রাখা হয়েছে। জাদুঘরটি দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা ও সুদৃশ্য ইন্টেরিয়রে সাজানো হয়েছে। এতে আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গৌরবের প্রতীক জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ মুক্তিসংগ্রামের দুর্লভ চিত্র, রয়েছে বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা চিঠি।

স্কুলশিক্ষক গোলাম মোর্শেদ তাঁর শিশুসন্তান সিদরাতুল মুনতাহাকে নিয়ে এই জাদুঘর দেখতে এসেছেন। তিনি সন্তানকে নানা ছবির ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। ফিরে যাওয়ার সময় শিশুটি বাবাকে বলছিল, সে আবার একানে আসবে।

কলেজছাত্র বিজয় ঘোষ তাঁর দুই বন্ধু নাজমুল হক ও সোহানুর রহমানকে সাথে করে নিয়ে এসেছেন। তাঁরা রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। সকালে এদিকে বেড়াতে এসে তিনি জাদুঘরটি দেখতে পান। তারপর সহপাঠীদের নিয়ে আবার এসেছেন। বিজয় জানান, ট্রেনের একটি বগিতে ঢুকে একনজরে বাংলাদেশের ইতিহাস জানা হয়ে যাচ্ছে, এটি খুবই ভালো একটা বিষয়।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.