কলকাতায় উড়ল কুড়া পক্ষী, ডানা মেলবে বিশ্বজুড়ে

সিনেমাটি ভারতসহ বিশ্বজুড়ে মুক্তি দিতে মুহাম্মদ কাইউমের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা করেছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক পরিবেশক সংস্থা কন্টিনেন্টাল এন্টারটেইনমেন্ট পিটিই লিমিটেড । ছবি: সংগৃহীত

একটি দৃশ্যের জন্য সচরাচর কত দিন অপেক্ষা করবেন নির্মাতা? এক মাস, ছয় মাস; বড়জোর এক বছর। কিন্তু ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমার কাঙ্ক্ষিত একটি দৃশ্য পেতে পাক্কা আড়াই বছর অপেক্ষা করেছেন নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউম। সিনেমার এক দৃশ্যে দেখা যায়, হাওরে ধান কাটার মৌসুমে হড়কা বান নামে, ২০১৯ সালে সেই বানের দৃশ্য ধারণের পর আর বানের দেখা মেলেনি; কাইউমের অপেক্ষা বছরের পর বছর পেরিয়ে দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়। ২০২১ সালের শেষে এসে সেই দৃশ্য ধারণ করেন তিনি।

এটা তো গেল মাত্র একটি দৃশ্য, পুরো সিনেমার দৃশ্য ধারণের জন্য দিনের পর দিন হাওরে পড়ে ছিলেন নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীরা। হাওর অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের জীবনসংগ্রামের গল্প পর্দায় তুলে আনতে মুহাম্মদ কাইউমকেও রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে। নানা চড়াই–উতরাই পেরিয়ে সাড়ে তিন বছরের চেষ্টায় সীমিত বাজেটে জীবনের প্রথম সিনেমা নির্মাণ করেছেন ৬০ বছর বয়সী কাইউম।

সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়ার পর সিনেমাটি মুক্তি দিতে গিয়ে মুদ্রার উল্টা পিঠ দেখতে হয়েছে নির্মাতাকে। সিনেমা হলের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন নির্মাতা, সিনেমায় কথিত তারকা নেই বলে সিনেমাটি চালাতে চাননি হলমালিকেরা। অনেক বলেকয়ে গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখায় মাত্র এক সপ্তাহ প্রদর্শিত হয়েছে সিনেমাটি। এরপর চট্টগ্রামের সুগন্ধা সিনেমা হল ও নারায়ণগঞ্জের সিনেস্কোপে কিছুদিন প্রদর্শিত হয়েছে।
এ সিনেমা নিয়ে দর্শকের মধ্যে তুমুল আগ্রহ থাকলেও হলগুলো সপ্তাহখানেকের মধ্যেই নামিয়ে ফেলে, এর মধ্যে ছবিটি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পাঠান নির্মাতা। বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ এ উৎসবের আন্তর্জাতিক বিভাগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৪টি সিনেমার সঙ্গে মনোনীত হয়েছে ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’। উৎসবের মধ্যে টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ ভারতের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সিনেমাটি নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতার রবীন্দ্রসদনের মঞ্চে মুহাম্মদ কাইউমের হাতে পদক তুলে দেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতার রবীন্দ্রসদনের মঞ্চে মুহাম্মদ কাইউমের হাতে পদক তুলে দেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

স্পেনের সিনেমা ‘আপঅন এন্ট্রি’–এর সঙ্গে যৌথভাবে উৎসবের সেরা সিনেমার (গোল্ডেন রয়েল বেঙ্গল টাইগার) পুরস্কার জিতেছে ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’; গত বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতার রবীন্দ্রসদনের মঞ্চে মুহাম্মদ কাইউমের হাতে পদক তুলে দেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউম বলেন, ‘যেকোনো স্বীকৃতি সবারই ভালো লাগে। উৎসবে ভালো ভালো সিনেমা ছিল। পুরস্কারটা আমরা যৌথভাবে পেয়েছি; স্পেনের সিনেমাটি খুবই ভালো। বিচারকেরা হয়তো মনে করেছেন, আমার ছবিটাও পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য।’
পুরস্কৃত হওয়ার পর সিনেমাটি তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সিনেমাটি ভারতসহ বিশ্বজুড়ে মুক্তি দিতে মুহাম্মদ কাইউমের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা করেছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক পরিবেশক সংস্থা কন্টিনেন্টাল এন্টারটেইনমেন্ট পিটিই লিমিটেড; সংস্থাটি ভারতে বাংলাদেশের আরেক সিনেমা হাওয়া মুক্তি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী শ্রেয়সী সেনগুপ্ত জানান, দুই মাস আগে থেকেই সিনেমার নির্মাতার সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা; ভারত তো থাকছেই, ইউরোপসহ বিশ্বজুড়ে ছবিটি পরিবেশন করবেন তাঁরা।

সিনেমার একটি দৃশ্য
সিনেমার একটি দৃশ্য

সেই সঙ্গে সিনেমাটি নির্মাণের পেছনের গল্পটাও দর্শকের সামনে তুলে আনতে চায় কন্টিনেন্টাল এন্টারটেইনমেন্ট পিটিই লিমিটেড। শ্রেয়সী সেনগুপ্ত বলছেন, ‘ছবিটি নির্মাণ করতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউম। তাঁর এ নিবেদন সত্যিই দৃষ্টান্ত হয়ে থাকার মতো। ক্যামেরার পেছনে তাঁদের নিবেদনটা তুলে ধরবেন তাঁরা; স্বাধীন সিনেমা বানানো কতটা কঠিন—সেটা দর্শকের সামনে তুলে আনতে হবে। এমন সিনেমার সঙ্গে থাকতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি।’
ঢাকা স্টার সিনেপ্লেক্সে আবারও সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার প্রাথমিক কথাবার্তা চলছে বলে জানালেন মুহাম্মদ কাইউম। সবকিছু চূড়ান্ত হলে ঢাকার দর্শকেরা আবারও প্রেক্ষাগৃহে বসে সিনেমাটি উপভোগ করতে পারবেন। নির্মাতা জানান, শিগগিরই এ সিনেমার সিকুয়েল নির্মাণে হাত দেবেন তিনি। সিনেমার শেষভাগে দেখা যায়, একটি পরিবার হাওর অঞ্চল ছেড়ে শহরে চলে আসে; তাদের শহুরে জীবন তুলে ধরে পরবর্তী সিনেমার গল্প লিখেছেন মুহাম্মদ কাইউম। কয়েক মাস পর দৃশ্য ধারণ শুরু করবেন তিনি।

ধ্রুপদি চিত্রলোক নিবেদিত কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন জয়িতা মহলানবিশ, উজ্জ্বল কবির, সুমী ইসলাম, সামিয়া আখতার, বাদল শহীদ, মাহমুদ আলম ও আবুল কালাম আজাদ। সংগীতায়োজন করেছেন সাত্যকি ব্যানার্জি।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.