‘জয়জয়িতা’ নাটকে কাঁদলো দর্শক

‘জয়জয়িতা’ নাটকের একটি দৃশ্য

‘আকাশে আজ রঙের খেলা। মনে মেঘের মেলা’—মঞ্চে বেজে উঠল গানটি। সুরে সুরে একটি চেয়ারে দোল খাচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মীর আবদুল কাইয়ুমের স্ত্রী মাসতুরা খানম। মীর আবদুল কাইয়ুম স্ত্রীর কাছ থেকে এই গানটিই শুনতে চাইতেন। এরপর ভরাট কণ্ঠে শোনা গেল নজরুলের ‘বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি’ কবিতার কয়েকটি চরণ। মীর আবদুল কাইয়ুমও স্ত্রীকে এই কবিতাই শোনাতেন। এটি ‘জয়জয়িতা’ নাটকের একটি দৃশ্য। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বুধবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে মঞ্চস্থ হয় নাটকটি।

একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মীর আবদুল কাইয়ুমকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় বাবলাবন বধ্যভূমিতে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। স্ত্রী মাসতুরা খানমের বয়ানে জয়জয়িতা নাটকে উঠে আসে একাত্তরের সেই হৃদয়বিদারক কাহিনি।

বুধবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে মঞ্চস্থ হয় নাটকটি
বুধবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে মঞ্চস্থ হয় নাটকটি

একইভাবে নাটকে উঠে আসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক হবিবুর রহমানের স্ত্রী ওয়াহিদা রহমান ও সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক সুখরঞ্জন সমাদ্দারের স্ত্রীর জীবনের হাহাকার। একইভাবে তাঁদের দুজনের স্বামীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে হবিবুর রহমানের লাশের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। সুখরঞ্জন সমাদ্দারের লাশ কাজলা এলাকার বসন্ত ঘোষ তাঁর নিজের বাড়িতে সমাহিত করে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তিনি চম্পা সমাদ্দারকে সেই কাহিনি বলেছিলেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক সুমনা সরকারের এক অভিনয়ে পুঁথিপাঠের সুরে শুরু হয় নাটক ‘জয়জয়িতা’। পর্যায়ক্রমে সুমনা সরকার তিন শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্ত্রী যথাক্রমে মাসতুরা খানম, চম্পা সমাদ্দার ও ওয়াহিদা রহমানের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

নাটকটির পাণ্ডুলিপি রচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক রহমান রাজু
নাটকটির পাণ্ডুলিপি রচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক রহমান রাজু

এ সময় দর্শকেরা কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। এ নাটক চলকালে মাসতুরা খানম ও চম্পা সমাদ্দার মঞ্চের নিচে সামনের সারিতে বসে ছিলেন। নাটকের শেষ দৃশ্যে তাঁদের মঞ্চে আহ্বান করেন সুমনা সরকার। তাঁরা মঞ্চে উঠে এলে সব দর্শক দাঁড়িয়ে তাঁদের সম্মান জানান।

মাসতুরা খানমও বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। একাত্তরে তাঁর স্বামীকে যখন ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন ছোট ছেলে তাঁর পেটে। সেই সন্তান কোনো দিন তাঁর বাবাকে দেখেননি। বড় হয়ে তিনি এখন আমেরিকায় থাকেন। মা–ও থাকেন তাঁর কাছে। এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে এসেছিলেন তিনি। শহীদ হবিবুর রহমানের স্ত্রী ওয়াহিদা রহমান মারা গেছেন।

নাটকটির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক কৌশিক সরকার
নাটকটির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক কৌশিক সরকার

নাটকটির পাণ্ডুলিপি রচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক রহমান রাজু। নির্দেশনা দিয়েছেন একই বিভাগের শিক্ষক কৌশিক সরকার। কোরিওগ্রাফি করেছেন ওই বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আশরাফিয়া তসিবা। চম্পা সমাদ্দারের চার বছরের ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শুদ্ধ সমুজ্জ্বল। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঝরনা, রূপন্তী, শিমুল, একা, কাঙ্ক্ষিতা, জয়া,  সেতু, আঁখি, রাগীব, মৌনীল, পলি ও ঝরনা।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.