যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে গোলাগুলি: প্রতিদিন ৫৩ জনের মৃত্যু

ছবি: সংগ্রহীত

বন্দুক সহিংসতা আমেরিকায় একটি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বলা হয় দেশটিতে মানুষের থেকে বন্দুকের সংখ্যাই বেশী। সমস্যাটি ব্যাপক হলেও বিষয়টি বেশ রাজনৈতিক। কারণ দেশটির জনগণ নিজেদের কাছে বন্দুক রাখার ব্যাপারে বেশ সোচ্চার।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকহারে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে চলেছে। ন্যাশভিলের একটি স্কুলে হামলাসহ এই বছর এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৩০টিরও বেশি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ স্কুলের এই হামলায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

‘গান ভায়োলেন্স আর্কাইভে’র পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গোলাগুলির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে৷ গত তিন বছরে প্রায় ১৮০০ এর বেশি গোলাগুলি হয়েছে দেশটিতে অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ২ টি করে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে থাকে।

এই পরিসংখ্যানগুলো শুধুমাত্র পাবলিক প্লেস বা বাসার মধ্য গোলাগুলির ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

২০১৭ সালে ‘লাস ভেগাসে’ একই ধরণের হামলায় ৫০ জনেরও বেশি লোক নিহত এবং ৫০০ জন আহত হয়েছিল। যদিও পরিসংখ্যান বলছে বেশিরভাগ গোলাগুলিতে ১০ জনেরও কম লোক নিহত হয়ে থাকে।

‘ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসি) এর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক-সম্পর্কিত ঘটনার কারণে ৪৮ হাজার ৮৩০ জন মারা গেছে যা ২০২০ সালের থেকে প্রায় ৮ শতাংশ বেশি। সিডিসির তথ্য অনুসারে, এর মধ্য ১৯ হাজারের বেশি মৃত্যু ছিল গুলি করে হত্যা করার ঘটনা এবং ২৪ হাজারের বেশি ছিল আত্মহত্যা। তথ্য বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা প্রতিদিন প্রায় ৫৩ জন নিহত হয়।

সংখ্যাটি কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় অনেক বেশি।

দেশটিতে এত ঘটনার পরেও ব্যাক্তিগত বন্দুক ব্যবহারের সংখ্যা প্রচুর। একটি গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩৯০ মিলিয়ন বন্দুক প্রচলন ছিল। প্রতি ১০০ জন বাসিন্দার জন্য ১২০ দশমিক ৫ টি আগ্নেয়াস্ত্র, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক করা গবেষণা থেকে জানা যায়। গত কয়েক বছরে বন্দুকের মালিকানা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে অ্যানালস অফ ইন্টারনাল মেডিসিন দ্বারা প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন প্রাপ্তবয়স্করা জানুয়ারী ২০১৯ থেকে এপ্রিল ২০২১ এর মধ্যে নতুন বন্দুকের মালিক হয়েছেন। যার অর্ধেক ছিলেন মহিলা।

দেশটিতে বন্দুক আইনের কঠোরতা নিয়েও রয়েছে নানা মতভেদ। এক সমীক্ষায় ৫৭ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন যে তারা কঠোর বন্দুক আইন চান।৩২ শতাংশ বলেছেন যে আইনগুলো একই থাকা উচিত। মাত্র ১০ শতাংশ লোক বলেছেন যে আইনকে নমনীয় করা উচিত।

কঠোর বন্দুক আইনের পক্ষে ডেমোক্র্যাটরা প্রায় একমত। প্রায় ৯১ শতাংশ কঠোর বন্দুক আইনের পক্ষে। অন্যদিকে, মাত্র ২৪ শতাংশ রিপাবলিকান কঠোর বন্দুক আইনের পক্ষে রায় দেয়।

রাজ্যগুলোর ভূমিকা নিয়েও রয়েছে নানান প্রশ্ন। ২০২১ সালের জুনে টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট একটি’ আইনে স্বাক্ষর করেছিলেন যা রাজ্যের বাসিন্দাদের লাইসেন্স বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই হ্যান্ডগান বহন করার অনুমতি দেয়। একইভাবে, গত বছরের এপ্রিলে জর্জিয়া রাজ্যে আগ্নেয়াস্ত্র গোপন বা প্রকাশ্যে বহন করার অনুমতির দেয়। বলা হয় রাজ্যের যে কোনো নাগরিকের লাইসেন্স বা পারমিট ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র বহন করার অধিকার রয়েছে। যদিও বেশ কিছু রাজ্যে আইনটি কঠোর করার দিকে কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এখন সবার কাছে একটাই প্রশ্ন, আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে এই বন্দুক আইন বা হামলার ঘটনা কতটা প্রভাব ফেলবে? বদলাবে কি বন্দুক ব্যবহারে নিয়ম নাকি আরও বেশি সহজলভ্য করে দেয়া হবে তাকে।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.