মাঝপথে বন্ধ ইমরান খানের ভাষণ, বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ
ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আবারও গ্রেপ্তারের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে ইউটিউবে তার একটি লাইভ ভাষণ শুরু হবার কয়েক মিনিটের মধ্যে মাঝপথে থেমে গেছে। কয়েক মিনিট আগে এক টুইটে তিনি লিখেছেন, পুলিশ আমার বাসভবন ঘিরে রেখেছে এবং এটা সম্ভবত ফের গ্রেপ্তার হবার আগে আমার শেষ টুইট। পাকিস্তান সরকার ইমরান ও তার দলের নেতাদের সেনা আইনে বিচারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার একদিনের মাথায় এ ঘটনা ঘটল। খবর স্কাই নিউজ।
লাইভ ভাষণে ইমরান বলেন, আমি সারাবিশ্বে আমার সেনাবাহিনীর পক্ষে কথা বলেছি। যেভাবে নিজের সন্তানের সমালোচনা করি, সেভাবে আমি সেনাবাহিনীর সমালোচনা করেছি, যাতে তারা সংশোধন হয়। ক্ষমতাসীন জোট পিডিএম এর সুযোগ নিয়ে আমার সঙ্গে সেনাবাহিনীর দূরত্ব সৃষ্টি করেছে।
কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমার দলের ২৫ জন মানুষ নিহত হয়েছেন, ৭০০ জন আহত হয়েছেন, সাড়ে সাত হাজারের বেশি কর্মীকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। আমার বাড়িতে ৪০ জন সন্ত্রাসী আছে দাবি করে আমাকে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। যদি এ দাবি সত্য হয়, তাহলে পুলিশ যথাযথ পরোয়ানা নিয়ে আসুক, তল্লাশি করুক। কিন্তু ভদ্র মানুষ আসতে হবে, আমি তাদের পুরো বাড়ি দেখাব।
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার দলের নেতাকর্মীদের ওপর সহিংসতার অভিযোগ আরোপ করা হয়েছে। তারা নিজেরাই তাদের লোক দিয়ে সহিংসতা ঘটিয়েছে। আমি সবসময় নেতাকর্মীদের সহিংসতা পরিহার করতে বলেছি। আমার প্রতিটি বক্তৃতায় এর প্রমাণ আছে। গত ২২ মার্চ দেওয়া বক্তৃতাতেও আমি সেনাবাহিনী ও সরকারি প্রতিষ্ঠান সুরক্ষার কথা বলেছি।
এর আগে বিকেলে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ইমরান খানকে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত কোনো মামলায় গ্রেপ্তার থেকে রেহাই দিয়ে আদেশ জারি করেন। ইমরান খানের পক্ষে তার আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওই আদেশ দেন।
পৃথক আদেশে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ইমরান খানের মন্ত্রিসভার মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী শিরিন মাজারি ও পিটিআই দলীয় সিনেটর ফালাক নাজকে মুক্তি দেন। গতকাল একই আদালতের আদেশে আদিয়ালা জেল থেকে মুক্তি পাবার পর এ দুজনকে জেল গেটেই ফের গ্রেপ্তার করেছিল লাহোর পুলিশ।
পিটিআই নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের ঘটনা ঘটছে পাকিস্তানের ছোটবড় সব শহরে। বিভিন্ন স্থানে দলের নেতাদের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের অনুপস্থিতিতে পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদের বাসায় অভিযানের পর তাকে না পেয়ে কয়েকজন আত্মীয়কে ধরে নিয়ে গেছে পাঞ্জাব পুলিশ। একই শহরে পিটিআই’র এক নারী কর্মীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করেছেন ওই নারী নিজেই। ইসলামাবাদে পিটিআইর কয়েকজন নারীকর্মীকে আজ সকালে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে গ্রেপ্তারের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
এদিকে সামরিক আইনে বিচারের ঘোষণার পর থেকে পিটিআই’র কিছু নেতার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দলের সহকারী মহাসচিব আমীর কায়ানি সংবাদ সম্মেলন করে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের ১৭ নম্বর আসনে পিটিআইর প্রার্থী আলি জাইদিকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ এক ভিডিও বার্তায় তিনি গত ৯ মে বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
এর আগে গতকাল পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সামরিক স্থাপনায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পিটিআই নেতাকর্মীদের সেনা আইনে বিচারের প্রস্তাব অনুমোদন করে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সভাপতিত্বে তার সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আসিম মুনীর, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামসাদ মির্জা,সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আনজুম, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমদ শাহ, নৌ বাহিনী প্রধান এডমিরাল মুহাম্ম্দ আমজাদ খান নিয়াজিসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা এ বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠক শেষে বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ দেশের সামরিক স্থাপনায় হামলার ঘটনায় জড়িত, পরিকল্পনাকারী ও উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে সংবিধান অনুযায়ী পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্ট, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনে মামলা ও বিচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তেরে একদিন আগে সোমবার রাওয়ালপিন্ডিতে সেনাসদরে সেনাবাহিনীর কোর কমান্ডারদের সভায় সামরিক স্থাপনায় হামলাকারীদের সামরিক আইনে বিচারের জন্য একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনীর ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।