যে কারণে ইসরায়েলে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে হামাস

ছবি : সংগৃহীত

ইসরায়েল ও হামাস আবারও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছ। শনিবার ( ৭ অক্টোবর ) নাটকীয়ভাবে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আকাশ, সমুদ্র এবং ভূমি থেকে হামলা চালায় হামাস। গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনি এ গোষ্ঠীটি হামলা চালিয়েছে। 

পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কেন হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এভাবে হামলা চালিয়েছে তা বিশ্লেষণ করেছে ্আল- জাজিরা। 

২০২১ সালে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দীর্ঘ ১১ দিন যুদ্ধ হয়। এরপর থেকে হামাস এক প্রকার নিস্ক্রিয় ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ফিলিস্তিনি এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ‘অপারেশন আল আকসা ঝড়’ নামে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযান শুরু করেছে। 

হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ৫ হাজার রকেট হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল স্বীকার করেছে তাদের ভূখণ্ডে হামাসের সৈন্যরা প্রবেশ করেছে। 

ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র দানিয়েল হাগারি জানিয়েছেন, হামাস ভূমি, সাগর এবং আকাশ থেকে একযোগে হামলা চালিয়েছে। স্থানীয় সময় ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে প্রথম রকেট হামলা চালায় হামাস। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে তারা গাজা উপত্যকায় হামাস গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘অপারেশন আয়রন সোর্ডস’ শুরু করেছে।

হামলার জন্য ইহুদিদের ছুটির দিনটি বেছে নিল হামাস। আজ ইহুদিদের ছুটির দিন ছিল। দীর্ঘ এক সপ্তাহ ধরে ইহুদিরা একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যা সুক্কু নামে পরিচিত।  

ইসরায়েলের যেসব এলাকায় হামলা চালিয়েছে হামাস 

তেল আবিরের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। এছাড়া তারা দক্ষিণাঞ্চলে সরাসরি যোদ্ধা পাঠিয়েছে। যারা ওই অঞ্চলে প্রবেশ করে উন্মুক্ত গুলি ছুড়ে। যা ইসরায়েলের মিডিয়ায় প্রচার করা হয়। পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায় হামাস যোদ্ধারা গাড়িতে করে যাওয়ার পথে গুলি ছুড়ে। 

একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, হামাস যোদ্ধারা একাধিক ইসরায়েলি বেসামরিক স্থাপনা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, যেখানের বাসিন্দারা ইসরায়েল সরকারের কাছে প্রাণ বাঁচানোর আবেদন জানিয়েছেন। 

এদিকে হামাসের হামলা প্রতিহত করতে বহু যুদ্ধ বিমান পাঠিয়েছে ইসরায়েল সেনাবাহিনী। গাজা উপত্যকায় হামাসকে লক্ষ্য করে তারা এ হামলা শুরু করেছে। 

টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাফার আজা, সেডেরট, সুফা, নাহাল ওজ, ম্যাগেন, বেইরি এবং রেইম সামরিক ঘাঁটিগুলোর আশেপাশে বন্দুক যুদ্ধ চলছে। 

জরুরি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বরাত দিয়ে ইসরায়েলের স্থানীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, হামাসের হামলায় ২২ ইসরায়েলি প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন ৫০০ শতাধিক নাগরিক। ইসরায়েলের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এতথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। 

আনাদলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় গাজা উপত্যকায় ৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ৫ জন। 

হামাস কেন ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে?

হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি আল জাজিরাকে বলেন, কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা যেসব নৃশংসতার সম্মুখীন হয়েছে তার জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, গাজাবাসীদের ওপর হামলা বন্ধের জন্য আমরা আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সহযোগিতা চাই। এছাড়া পবিত্র মসজিদ আল আকসা সহ ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার পেতে এ হামলা চালানো হয়েছে। 

হামাসের সামরিক কমান্ডার মোহাম্মাদ দেইফ বলেন, পৃথিবীতে দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর জন্য এটাই সবচেয়ে বড় যুদ্ধের দিন, এজন্য ৫ হাজার রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। 

হামাস টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের বাসিন্দাদের এ যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে, এছাড়া আরব এবং ইসলামিক জাতিকে এতে অংশ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। 

যা বলছে ইসরায়েল সরকার

ইসরায়েল সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গাজা উপত্যকার কাছাকাছি বসবাসকারী তাদের বাসিন্দারের সতর্ক করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামাস সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসরায়েলে বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। এ জন্য তাদের মাসুল দিতে হবে। 

ইসরায়েল প্রেসিডেন্ট ইসহাক হারজগ এক্সে দেওয়া এক পোস্টে (সাবেক টুইটার) বলেন, আমরা কঠিন এক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেছেন, আমরা এ যুদ্ধ জয়ী হব। 

এদিকে হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়েছে সিজেক সরকার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। 

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.