ক্যানসার চিকিৎসার নতুন থেরাপিতে ‘যুগান্তকারী’ সাফল্য

কিশোরী আলিসা । ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের মে মাসে যুক্তরাজ্যের লেস্টার শহরের বাসিন্দা ১৩ বছরের আলিসার ব্ল্যান্ড ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর দেড় বছর ধরে কেমোথেরাপি, বোনম্যারো প্রতিস্থাপনসহ সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু এতেও কোনো উন্নতি না দেখে আলিসার পরিবার সব আশা হারিয়ে ফেলে। আলিসা আর বাঁচবে না ধরে নিয়ে তার শেষদিনগুলো সুন্দর করে তোলার চেষ্টা শুরু করে পরিবার। এ পরিস্থিতিতে আলিসার ক্যানসার সারাতে পরীক্ষামূলক নতুন একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। ‘বেস এডিটিং’ নামের নতুন এই চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগে ‘যুগান্তকারী’ সাফল্য পাওয়া গেছে। কিশোরী আলিসা এখন ক্যানসারমুক্ত।

গত বছর মে মাসে আলিসার টি-সেল অ্যাকিউট লিমফোব্ল্যাস্টিক লিউকোমিয়া ধরা পড়ে। এরপর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। সব রকম চিকিৎসাপদ্ধতি ব্যবহারের পরও যখন আশান্বিত হওয়ার মতো ফল পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন যুক্তরাজ্যের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আলিসার শরীরে নতুন এ চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। ছয় মাস আগে এ চিকিৎসাপদ্ধতি আলিসার ওপর প্রয়োগ করা হয়। এখন আলিসার শরীরে ক্যানসার নেই। তবে আবার ফিরে আসে কি না, এ জন্য তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

কয়েক বছর আগেও ক্যানসার চিকিৎসায় এমন বিষয় অকল্পনীয় ছিল। তবে জেনেটিকস বা বংশগতিবিদ্যার অবিশ্বাস্য উন্নতির ফলে এখন চিকিৎসা সম্ভব হয়ে উঠেছে। আলিসার ক্যানসার সারাতে প্রয়োগ করা বেস এডিটিং চিকিৎসাপদ্ধতির উদ্ভাবন হয়েছে মাত্র ছয় বছর আগে। মানুষের শরীরের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণকারী ডিএনএর এই ‘বেস’কে বলা হয় জীবনের ভাষা। চার রকম বেস আছে। এগুলো হলো—অ্যাডেনিন (এ), সাইটোসিন (সি), গুয়ানিন (জি) ও থাইমিন (টি)। এই চার বেসকে মানবদেহের জেনেটিক কোডের ভিত্তি বলা হয়।

এই কোডের যেকোনোটিতে কোনো কোনো পরিবর্তনের জন্য ক্যানসার কোষ তৈরি হয়। বেস এডিটিং পদ্ধতিতে পরিবর্তিত ওই কোডের জায়গায় স্বাভাবিক কোড প্রতিস্থাপন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ক্যানসার কোষ তৈরিকারী কোড নিষ্ক্রিয় হয়। মূলত এ পদ্ধতি ব্যবহার করেই আলিসার ক্যানসারের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আলিসার পরিবারের কাছে যখন নতুন এ পদ্ধতির ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, তখন আলিসার মায়ের প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘আপনারা কি এটা করতে পারবেন?’ তবে নতুন এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত আলিসাই নিয়েছিল। আলিসা ও তার পরিবারের সম্মতি পাওয়ার পর চিকিৎসকেরা এটা নিয়ে কাজ শুরু করেন।

গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের অধ্যাপক ওয়াসিম কাশিম বলেন, ‘নতুন এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিকিৎসা দেওয়া বিশ্বের প্রথম রোগী হলো আলিসা। জেনেটিক বিষয় নিয়ে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের দ্রুত উন্নতি ঘটছে। এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন রোগ সারিয়ে তোলার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।’

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.