মাসা আমিনির মৃত্যুর জের ধরে তেহরানেই ৪০০ বিক্ষোভকারীর কারাদণ্ড

নীতি পুলিশের হেফাজতে মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে । ছবি: এএফপি

ইরানের রাজধানী তেহরান ও আশপাশের এলাকায় ৪০০ বিক্ষোভকারীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেককে ১০ বছরের কারাভোগের সাজা দেয়া হয়েছে। দেশটির তেহরান প্রদেশের বিচার বিভাগের প্রধান আলী আলঘাসি-মেহর বলেন, বিচারকেরা দাঙ্গা সৃষ্টিকারীদের শাস্তি দিয়েছেন।

ইরানের বিচার বিভাগের মিজান অনলাইন ওয়েবসাইটে আলঘাসি-মেহর বলেন, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ১৬০ জনকে পাঁচ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, ৮০ জনকে ২ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ১৬০ জনকে ২ বছর করে কারাদাণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ইরানের মোট ৩১টি প্রদেশের একটি হচ্ছে তেহরান। একটি প্রদেশে ৪০০ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হলে দেশটিতে মোট কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিক্ষোভকারীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে ইরানে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৪ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশটির পুলিশ হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যু ঘিরে এ বিক্ষোভ ছড়ায়। বিক্ষোভ দমনে কর্তৃপক্ষ শুরু থেকে বলপ্রয়োগ শুরু করে। বিক্ষোভকারীদের দমাতে মারধর থেকে শুরু করে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় জানিয়েছে, ইরানের বিক্ষোভে ৪০ শিশুসহ ৩০০ জনেরও বেশি ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

বিক্ষোভ যাতে ছড়াতে না পারে, এ জন্য দেশটিতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি ভিন্নমত দমনে আদালতের মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে তা প্রচার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১১ জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

গত সোমবার ইরানের বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, মাশহাদ শহরে ২৩ বছর বয়সী মাজিদ রেজা রাহনাভার্দের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্যকে ছুরিকাঘাত ও হত্যার ঘটনায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আধা সরকারি সংবাদ সংস্থা ফারস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাজিদ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী বাসিজের দুই সদস্যকে হত্যা এবং চারজনকে আহত করেছেন। রেভল্যুশনারি গার্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাসিজ বাহিনী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ইরানে চলমান ধরপাকড় অভিযানের সম্মুখসারিতে আছে।

ইরানে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় গত বৃহস্পতিবার। ফাঁসিপ্রাপ্ত ঐ ব্যক্তি মহসেন সেকারির বিরুদ্ধে তেহরানে এক নিরাপত্তাকর্মীকে ছুরিকাঘাত ও রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করার অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় ইরান সরকার ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়ে।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক ডেপুটি ডিরেক্টর ডায়ানা এলতাহাওয়ি বলেছেন, তরুণ বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি তাঁদের মধ্যে ভীতি ছড়ানো এবং বিক্ষোভ দমনের একটি হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অ্যামনেস্টি বলছে, ইরানে বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে আরও ২০ জনের মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকি রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা মনে করছেন, যে হারে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে, তাতে দেশটিতে গণহত্যার গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.