কংগ্রেস-বিজেপির নতুন বিতর্কে উত্তাল রাজ্যসভা

মঙ্গলবার বিজেপি-কংগ্রেস বিতর্কে রাজ্যসভা উত্তাল হয়ে ওঠে। নয়াদিল্লি, ভারত ।ছবি: এএনআই

স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদান ঘিরে নতুন বিতর্কে জড়ালো কংগ্রেস ও বিজেপি। দুপক্ষের এ বিতর্কের জের ধরে আজ মঙ্গলবার রাজ্যসভা উত্তাল হয়ে উঠে। বিজেপির দাবি, কংগ্রেসকে ক্ষমা চাইতে হবে। কংগ্রেস পাল্টা জানায়, ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যা বলা হয়েছে, তা ঐতিহাসিক সত্য। এ পরিস্থিতিতে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় জানান, সভার বাইরে কোন ধরণের মন্তব্যের জন্য সভায় ক্ষমা চাওয়ার দাবি অযৌক্তিক।

যে মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক, তা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বলা। কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রাকে কটাক্ষ করে বিজেপি বলছে, ওই যাত্রার উদ্দেশ্য ভারতকে টুকরো করা। গতকাল সোমবার রাজস্থানের আলওয়ারে এক জনসভায় বিজেপির ওই মন্তব্যের জবাব দেন খাড়গে। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেসের অবদান ইতিহাসস্বীকৃত, আত্মবলিদানের তালিকাও দীর্ঘ। কংগ্রেস দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন।’ এরপরই বিজেপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কী করেছেন আপনারা? স্বাধীনতার জন্য আপনাদের বাড়ির একটা কুকুরও কি প্রাণ দিয়েছে? অথচ আপনারা নাকি দেশপ্রেমিক, আর প্রশ্ন করলেই আমরা হয়ে যাই দেশদ্রোহী।’

আজ রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল দাবি করেন, বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য কংগ্রেসকে ক্ষমা চাইতে হবে। গোয়েল বলেন, খাড়গে শুধু অসত্যই বলেননি, অশালীন ভাষাও ব্যবহার করেছেন।

এ নিয়ে শুরু হয়ে যায় বিজেপি–কংগ্রেসের বিতর্ক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সভার চেয়ারম্যান সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘শিশুসুলভ আচরণ করবেন না। সারা দেশ আপনাদের দেখছে। হতে পারে কেউ আবেগতাড়িত হয়ে কিছু বলে ফেলেছেন। কিন্তু সভার বাইরে বলা কথার জন্য সভায় ক্ষমা চাওয়া যায় না।’ অধ্যক্ষের রুলিং সত্ত্বেও সভা উত্তাল থাকে। বিরোধী নেতা খাড়গে ক্ষমা চাওয়ার দাবি নস্যাৎ করে বিজেপি সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় যারা বারবার ক্ষমা চেয়ে এসেছে, তারা আজ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ক্ষমা চাইতে বলছে। ভারত জোড়ো যাত্রাকে পরিহাস করে বলছে, এটা নাকি “ভারত তোড়ো” যাত্রা। এ দেশের জন্য ইন্দিরা ও রাজীব গান্ধী প্রাণ দিয়েছেন। আপনারা কী করেছেন? একজনও কি আছেন, যিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মবলিদান করেছেন?’ খাড়গে বলেন, ‘আমি আবার বলছি, যাঁরা ক্ষমা দাবি করছেন, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁদের বিন্দুমাত্র অবদান নেই।’

খাড়গে তাওয়াং প্রসঙ্গেরও অবতারণা করেন। তিনি বলেন, চীন বারবার জমি দখল করছে। বারবার সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে আসছে। অথচ সরকার সংসদে আলোচনা পর্যন্ত করতে চায় না। তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। খাড়গে বলেন, ‘এই সরকারের হাঁকডাক সিংহের মতো। কিন্তু কাজের সময় ইঁদুর!’

মাওবাদী দাপাদাপি কমেছে

দেশে সর্বত্র মাওবাদী কার্যকলাপ কমেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই আজ লোকসভায় এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়ে বলেন, বামপন্থী সন্ত্রাসের মোকাবিলায় জাতীয় নীতি ও অ্যাকশন প্ল্যানের সুষ্ঠু প্রয়োগের ফলে এই সাফল্য।

দেশে মাওবাদী কার্যকলাপ বেড়েছে না কমেছে জানতে চেয়েছিলেন তৃণমূল সংসদ সদস্য দীপক অধিকারী (দেব)। তাঁর প্রশ্নের জবাবে নিত্যানন্দ রাই লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ২০১০ সালে সারা দেশে বামপন্থী সন্ত্রাসের (মাওবাদী–নকশালপন্থী) ঘটনা ঘটেছিল ২ হাজার ২১৩টি। ২০২১ সালে হয়েছে ৫০৯টি। অর্থাৎ ৭৭ শতাংশ কমেছে। এ ধরনের সন্ত্রাসে নিহত হওয়ার হার কমেছে ৮৫ শতাংশ। ২০১০ সালে সারা দেশে ১ হাজার ৫ জন নিরাপত্তারক্ষী ও সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। ২০২১ সালে সেই সংখ্যা ১৪৭।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, মাওবাদী–নকশালপন্থীদের প্রভাব রাজ্যে রাজ্যে কমছে। ২০১০ সালে দেশের ৯৬ জেলার ৪৬৫টি থানা ছিল বামপন্থী সন্ত্রাসীদের কবলে। ২০২১ সালে প্রভাব রয়েছে ৪৬ জেলার ১৯১ থানা এলাকায়। এর ফলে নিরাপত্তাজনিত খরচও কমেছে। সবচেয়ে উপদ্রুত এলাকার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাওবাদী উপদ্রুত রাজ্য ছত্তিশগড়। ২০২১ সালে এ রাজ্যে বামপন্থী সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে ২৫৫টি। নিহত হয়েছেন ১০১ জন। এরপরই উপদ্রুত রাজ্য ঝাড়খন্ড। সেখানে ১৩০টি ঘটনায় মারা গেছেন ২৬ জন। সরকার যাঁদের ‘আরবান নকশাল’ বলে, তাঁদের কতজনকে বেআইনি কার্যকলাপ রোধ আইনে (ইউএপিএ) আটক রাখা হয়েছে, সে প্রশ্নের উত্তর মন্ত্রী দেননি।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.