আওয়ামী লীগই ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে: শেখ হাসিনা

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোট দেওয়ার যে সাংবিধানিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সেই অধিকার আওয়ামী লীগই নিশ্চিত করেছে।

আজ শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশে নির্বাচন কী ছিল, এমন প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন মানেই ছিল, আমরা যেটি বলতাম ১০টা হোন্ডা, ১০টি গুন্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা। এই নির্বাচনী সংস্কার, এটিও কিন্তু আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল, মহাজোট মিলে আমরা একটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর যে কাজই করুক, আমাদের জেল খাটাক আর যা-ই করুক, তারা অন্তত সেই প্রস্তাবের কিছু কাজ বাস্তবায়ন করে গেছে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার করেছিলেন। সেটি বাদ দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা করা হয়েছে, যাতে কেউ ভুয়া ভোট না দিতে পারেন।…স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এখন চালু করা হয়েছে। আমাদেরই স্লোগান ছিল, আওয়ামী লীগের স্লোগান, “আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব”।’

ভোট দেওয়ার যে অধিকার, তা সাংবিধানিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই অধিকার আওয়ামী লীগই নিশ্চিত করেছে। জানি, ভোটকে নিয়ে অনেকেই কন্ট্রোভার্সিয়াল করতে চায়। অনেকে অনেক কথা বলে। আমরা নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন করে দিয়েছি। সেই আইন মোতাবেকই রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠন করছেন। সেখানে আমরা আওয়ামী লীগ কোনো হস্তক্ষেপ করি না। নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। আগে নির্বাচন কমিশনের আর্থিক সক্ষমতা নিজস্ব ছিল না, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে রাখা ছিল।

আমরা সেটি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনকে এই আর্থিক সক্ষমতা, তাদেরটা তাদের হাতে দিয়েছি। বাজেট থেকে সরাসরি তাদের টাকা দেওয়া হয়, যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করেছি। ভোটার আইডি কার্ড করে দিয়েছি, ইভিএম কিছু কিছু চালু হয়েছে। সেখানে কিন্তু কারচুপি করার কোনো সুযোগ আছে বলে আমরা জানি না।’      

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যদি জনগণের ভোট চুরির দুরভিসন্ধি থাকত, তাহলে আমরা সেটি কেন করব? খালেদা জিয়ার মতো ওই আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন করতাম, তা তো আমরা করিনি। আমাদের জনগণের ওপর আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। আমরা সেই বিশ্বাস নিয়েই চলি।’

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সম্মেলন শুরু হয়। শুরুতে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন শেখ হাসিনা। দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনী পর্বে শোকপ্রস্তাব উপস্থাপন করেন দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ওবায়দুল কাদের। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শেখ হাসিনা তাঁর বক্তৃতা শুরু করেন। তিনি প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ভাষণ দেন।

বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ, অন্তত আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে এই বাংলাদেশকে আমরা কিন্তু এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি।’ ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে ২০২২ পর্যন্ত পরপর তিনবার ক্ষমতায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর এই ক্ষমতায় আছে বলেই আজ বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। কোভিডের পর এখন আবার আরেকটা এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন। এতে সারা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত। উন্নত ও ধনী দেশগুলো আজ অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে। বাংলাদেশে আমরা এখনো আমাদের অর্থনীতি সচল রাখতে পারছি, তারপরও এর আঘাতটা আমাদের ওপর আসবে।’  

অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু, আমাদের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিল। দুর্নীতি করে টাকা বানাতে আসিনি। আমার বাবা রাষ্ট্রপতি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আর আমি চার-চারবার প্রধানমন্ত্রী। আমাদের পরিবার দুর্নীতিই যদি করলে দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারতাম না। আমরা দেশের মানুষকে দিতে এসেছি। মানুষের জন্য করতে এসেছি। এ কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে, এটি অন্তত আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে এটি মেনে নিতে পারি না। চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি, ধন্যবাদ জানাই আমার দেশের মানুষকে; তারাই আমাকে সাহস দিয়েছে। শক্তি দিয়েছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছি। শুধু পদ্মা সেতু নয়, আজ তিনটি এয়ারপোর্ট আন্তর্জাতিক মানের আওয়ামী লীগ সরকারের করা। চতুর্থটি হচ্ছে কক্সবাজারে। সারা দেশে রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ করেছি। কিছুদিন আগে ১০০টি সেতু, ১০০টি সড়কের উন্নতি, এটি আমরা করতে পেরেছি। কোনো দিন আগে কেউ এভাবে একসঙ্গে করতে পেরেছে?…আমরাই পারি দেশের উন্নতি করতে, এটিই হচ্ছে বাস্তবতা।’

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.