বছর শেষে করোনাকে ঘিরে নতুন উদ্বেগ

করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে চতুর্থ ডোজের টিকা দিচ্ছেন এক স্বাস্থ্যকর্মী। গত মঙ্গলবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে মানুষ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। এরপর তা মহামারি আকারে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এসে নতুন উদ্বেগের কথা শোনা যাচ্ছে। করোনার অমিক্রনের ধরনের (ভেরিয়েন্ট) একটি উপধরনের কারণে এই ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ ২১ ডিসেম্বরের হালনাগাদ রোগতাত্ত্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ এক সপ্তাহে (১২-১৮ ডিসেম্বর) চীনে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৭৪ নতুন রোগী শনাক্ত হন। এই সময় মারা যান ৩৩৭ জন। এর আগের সপ্তাহেও দেশটিতে প্রায় একই সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হন ও মারা যান। এই সময় জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। কিছু দেশে সংক্রমণ বাড়লেও সার্বিকভাবে বৈশ্বিক সংক্রমণ পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বরং শেষ সপ্তাহে মৃত্যু আগের সপ্তাহের চেয়ে ৬ শতাংশ কমেছে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের একটি ধরন অমিক্রন। অমিক্রনের একটি উপধরন বিএ-৫। বিএ-৫ -এর একটি উপধরন বিএফ (বিএ.৫.২.১.৭)। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে এই নতুন উপধরন শনাক্ত হয়েছে। বিএফ অন্য যেকোনো উপধরনের চেয়ে দ্রুত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এটাই উদ্বেগের কারণ।

সম্প্রতি চীনে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরপরই প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি দেশবাসীকে মাস্ক পরার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি ভাইরাসটির জিন বিশ্লেষণ করারও কথা বলেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, সর্বশেষ এক সপ্তাহে ভারতে নতুনভাবে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৩০ জন। ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, ইতিমধ্যে ভারতে উপধরন বিএফে আক্রান্ত চারজন শনাক্ত হয়েছে। এঁদের দুজন ওডিশা ও দুজন গুজরাট রাজ্যের।

প্রতিবেশী দেশ ভারতে সংক্রমণ বাড়লে বা নতুন ধরন শনাক্ত হলে উদ্বেগ বাড়ে বাংলাদেশে। যদিও বাংলাদেশে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। গতকাল শনিবার সাতজন নতুন আক্রান্তের তথ্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৮।

অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, ‘সাতজন বা আটজন সাত হাজার বা আট হাজার হতে বেশি সময় না-ও লাগতে পারে। মনে রাখতে হবে, চীনের উহানের গুটি কয়েক মানুষের কাছ থেকে সারা বিশ্বে করোনা ছড়িয়ে পড়েছিল।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও সতর্ক। গত বৃহস্পতিবার অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে থাকা কোভিড হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়। গতকাল (শনিবার) রাতে করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির সভা হওয়ার কথা ছিল বলে অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে। আজ রোববার সকাল ১০টায় কমিটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনসংযোগ কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে ২০ ডিসেম্বর থেকে করোনা টিকার নিয়মিত কেন্দ্রগুলোতে চতুর্থ ডোজ টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে চতুর্থ ডোজ টিকা নিয়েছিলেন ৪৭ হাজার ১০৬ জন। এর মধ্যে ১৩৬ জন নিয়েছেন চীনের সিনোফার্মের টিকা। বাকি সবাই যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের টিকা।

তবে টিকার মেয়াদ নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছু সন্দেহ দেখা দিয়েছে। টিকাকেন্দ্রগুলোতে পাঠানো ফাইজারের টিকার ভায়ালে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ৩০ নভেম্বর লেখা আছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই টিকা আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে অধিদপ্তর ফাইজারের টিকার মেয়াদ বাড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৮৮ শতাংশ করোনা টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ পেয়েছেন যথাক্রমে ৭৪ ও ৩৮ শতাংশ মানুষ।

আরো সংবাদ

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.