দলকে ভালোবেসে উৎসব করতে এসেছিলেন তাঁরাও

তিন চাকার ‘ডিজিটাল নৌকা’ নিয়ে ঘুরছেন মিনারুল। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায়

আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়েই পদ নেই খুলনার মিনারুল ইসলামের। তিনি থাকেন রাজধানীর মতিঝিল এলাকায়। কাজ করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। দলের জাতীয় সম্মেলনে তিন চাকার ‘ডিজিটাল নৌকা’ নিয়ে গতকাল শনিবার সকালেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় হাজির হন তিনি।

দিনভর নৌকা নিয়ে সম্মেলনস্থলের চারপাশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাঁর নৌকার পাশে দাঁড়িয়ে অনেক নেতা–কর্মী ছবি ও সেলফি তুলেছেন। কেউ কেউ তাঁর নৌকার চলাচলের দৃশ্য ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়েছেন।

মিনারুলকে ঘিরে সাংবাদিকদেরও বেশ আগ্রহ ছিল। তিনি বলেন, মানুষকে আনন্দ দিতে ডিজিটাল নৌকা বানিয়েছেন তিনি। এই নৌকায় মাইক, গান শোনানোর ব্যবস্থা, ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা, জেনারেটর ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে। কাঠ, লোহা ও স্টিল দিয়ে নৌকা তৈরির পর এটিকে তিন চাকার গাড়িতে রূপান্তর করেছেন তিনি।

মিনারুলের ডিজিটাল নৌকার সামনে ও পেছনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি রয়েছে। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের খণ্ড খণ্ড চিত্রও নৌকায় টাঙিয়েছেন তিনি।

মিনারুলের মতোই নৌকার আদলে রিকশা তৈরি করে তা নিয়ে দিনভর সম্মেলনস্থলের আশপাশের সড়কে ঘুরেছেন নেত্রকোনার বাসিন্দা সিদ্দিক মিয়া। তিনি জানান, নেত্রকোনা থেকে তিন দিন তিন রাত প্যাডেল চেপে এই লাল–সবুজ রঙের রিকশা নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছেন।

আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন ঘিরে গতকাল সকাল থেকে হাজারো নেতা-কর্মীর পদচারণে মুখর ছিল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা। চারদিকে ছিল উৎসবের আমেজ। সকাল থেকে সাদা পাঞ্জাবি-কালো কোটসহ রং–বেরঙের নানা পোশাক আর ব্যানার-ফেস্টুন হাতে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থলে জড়ো হতে থাকেন নেতা–কর্মীরা।

সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে শুধু দলের কাউন্সিলর, প্রতিনিধি ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু এই আয়োজন দেখতে হাজির হন হাজারো নেতা–কর্মী। সম্মেলনস্থলের পাশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দুপুরের পর শুরু হয় কাউন্সিলর অধিবেশন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনেও ভিড় ছিল হাজারো নেতা–কর্মীর।

সম্মেলন ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের সড়কে দিনভর অবস্থান করে নেতা–কর্মীরা দলের পক্ষে স্লোগান দিয়েছেন, আনন্দ–উল্লাস করেছেন। নেতা–কর্মীদের বেশির ভাগ এসেছিলেন কালো কোর্ট পরে, যা মুজিব কোর্ট নামে পরিচিত। আবার একেক জেলার নেতারা একই রঙের পাঞ্জাবি বা টি–শার্ট বা ক্যাপ (টুপি) পরে এসেছিলেন। কেউ এসেছিলেন লাল–সবুজ পোশাক পরে, কারও হাতে ছিল জাতীয় পতাকা, কারও মাথায় বাঁধা ছিল দলের প্রতীক নৌকা।

সম্মেলনকেন্দ্রের বাইরে কথা হয় টাঙ্গাইল থেকে আসা শেখ মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর প্রত্যাশা দল আরও সুসংগঠিত হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে।

সম্মেলনস্থলে প্রবেশের অনুমতি যাঁরা পাননি, তাঁরা শাহবাগ মোড় থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য, হাকিম চত্বর, দোয়েল চত্বর, মৎস্য ভবন, রমনা গেটসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারদিকেই অবস্থান নেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হওয়ার পর যখন বিরতি দেওয়া হয়, তখন নেতা–কর্মীদের একটি অংশ রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের সড়কে চলে যান। নতুন নেতা নির্বাচনে যখন মূল অধিবেশন শুরু হয়, তখন তাঁরা রাস্তা ও ফুটপাতে অবস্থান নিয়ে নৌকা ও শেখ হাসিনার নামে স্লোগান দিতে থাকেন।

দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার নাম ঘোষণার খবর মাইকে শোনার সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন নেতাকর্মীরা। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নামে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। এরপর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওয়ায়দুল কাদের নাম ঘোষণার পর তখনো উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যায় তাঁদের।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.