পরিকল্পিত উন্নয়ন ব্যতীত ২০ বছরের মাঝেই পরিত্যক্ত হবে চট্টগ্রাম নগর: মেয়র

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, মান্ধাতা আমলের পরিকল্পনা দিয়ে পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলা সম্ভব না। পরিকল্পিত নগর করতে হলে উন্নত মানের পরিকল্পনা প্রয়োজন। তা নাহলে চট্টগ্রাম নগর ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে পরিত্যক্ত হয়ে যাবে।

‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় মাস্টারপ্ল্যান (২০২০-২০৪১) প্রণয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত অংশীজন সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) যৌথভাবে আজ বুধবার বিকেলে এই সভার আয়োজন করে। চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার পুরোনো নগর ভবনের কে বি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা অংশ নেন।

সভায় মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ১৯৯৫ সালে একটি মহাপরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু সেটির কতটুকু কার্যকর করা হয়েছে, তা প্রশ্নের বিষয়। এই নগর নষ্ট করার জন্য সবার দায় রয়েছে। পাহাড় কেটে আবাসন গড়ে তোলা হয়েছে। খাল-নালা ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। খেলার মাঠে ভবন আর বাজার বসেছে। এগুলো করা না হলে সুন্দর চট্টগ্রাম নগর নষ্ট হতো না।

নতুন মহাপরিকল্পনায় চট্টগ্রাম নগর আদৌ পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে মেয়র মো. রেজাউল করিম বলেন, একটি নগরে যা থাকা দরকার, তা নগরবাসী পাচ্ছে না। তাই নগরকে কয়েকটি অঞ্চলে বিভক্ত করে সুনির্দিষ্ট মহাপরিকল্পনা করতে হবে। যাতে সেখানে খেলার মাঠ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, উন্মুক্ত মঞ্চসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু থাকতে হবে।

সভায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মেয়র। তিনি বলেন, সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩৬টি খালে কাজ করছে। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে কাজ করার কারণে জলাবদ্ধতার কষ্ট কমছে না। এই শীত মৌসুমেও নগরের চকবাজার ও বাকলিয়া এলাকায় হাঁটুর ওপরে পানি জমে আছে।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মানুষ এবার জলাবদ্ধতায় কষ্ট পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আগামী মার্চের মধ্যে নগরের খালগুলো থেকে মাটি উত্তোলনের কাজ শেষ করতে হবে। নগরে একসময় ৭২টি খাল ছিল। এখন আছে ৫৭টি। তার মধ্যে ৩৬টিতে কাজ করছে সিডিএ। বাকি ২১টি ধ্বংসের পথে। আরএস (রিভিশনাল সার্ভে) জরিপ অনুযায়ী খালগুলো উদ্ধার করতে করতে হবে। খালের জায়গা দখলকারীরা যতই প্রভাবশালী হোক, তাঁদের নির্মাণ করা স্থাপনা অবশ্যই ভেঙে খাল উদ্ধার করতে হবে।

মেয়র বলেন, নতুন মহাপরিকল্পনায় চট্টগ্রামকে পর্যটনবান্ধব নগর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে বিদেশি পর্যটক আসবেন। বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে।

অংশীজন সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিডিএর চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, আগের নগর মহাপরিকল্পনা করা হয়েছিল ঘরে বসেই। ওয়ার্ড পর্যায়ে যাওয়া হয়েছে কম। এবার এলাকায় এলাকায় গিয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে নতুন মহাপরিকল্পনা করা হবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন প্যানেল মেয়র আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর কাউন্সিলর হাসান মুরাদ, মো. মোবারক আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল, সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সিডিএর উপপ্রধান পরিকল্পনাবিদ মো. আবু ঈছা আনছারী ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেটেক্স-টিলার-ইজিএসের দলনেতা অধ্যাপক আহসানুল কবির প্রমুখ।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.