সরকারবিরোধীদের অপকর্ম প্রতিহত করবে আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগের নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় কমিটির যৌথ সভায় বক্তব্য দেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় । ছবি: পিআইডি
দলের নতুন কমিটি নিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। আর এই পথচলার শুরুতেই সরকারবিরোধীদের যেকোনো অপকর্ম প্রতিরোধ করার প্রতিজ্ঞা করলেন তিনি। পাশাপাশি দলের নেতা-কর্মীদের দৃঢ় ও সজাগ থাকতে নির্দেশনা দিলেন।
গতকাল শনিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় কমিটির যৌথ সভা করেন শেখ হাসিনা। গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে দলটির নতুন নেতৃত্ব আসার পর সভাপতিমণ্ডলীর একটি সভা হয়েছিল। পুরো দলকে নিয়ে এই প্রথম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত টুঙ্গিপাড়ায় যৌথ সভা করলেন তিনি।
এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের পরপর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় যৌথ সভা করেছিলেন শেখ হাসিনা।
যৌথ সভায় যোগ দিতে গত শুক্রবার সকালে সড়কপথে টুঙ্গিপাড়ায় যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। শুরুতে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সরকারপ্রধান। পরে শুক্রবারই সড়কপথে খুলনায় যান তিনি। সেখানে তাঁর মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে কেনা জমি দেখেন। ওই দিনই টুঙ্গিপাড়ায় ফিরে এসে নিজ বাড়িতে রাতযাপন করেন।
এদিকে যৌথসভা উপলক্ষে গতকাল সকালে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের বেশির ভাগ নেতা বাসে করে টুঙ্গিপাড়ায় যান। দুপুর সাড়ে ১২টার পরে সব পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেখানে বঙ্গবন্ধুসহ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে নিহতদের স্মরণে দোয়ায় অংশ নেন সবাই।
বেলা দেড়টার পরে টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ১টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যৌথসভায় অংশ নেন তিনি। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও গোপালগঞ্জ জেলা, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। শোকপ্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর সভা মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, এর আগে গতকাল সকালে টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতী ইউনিয়নের পুবের বিলে নিজেদের পৈতৃক জমি পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই এলাকার জমি বছরের আট-নয় মাস পানির নিচে থাকে। ভাসমান বেড তৈরি করে সবজি ও অন্যান্য ফসল আবাদের মাধ্যমে জমিগুলো চাষের আওতায় আনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি কোথাও এক ইঞ্চি জমি খালি না রাখার তাগিদ দেন।
‘প্রতিরোধ গড়তে হবে’
যৌথসভার বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। এই মাটিতে (টুঙ্গিপাড়া) বসে এই প্রতিজ্ঞা নিচ্ছি যে বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতির গতিরোধ যাতে কেউ করতে না পারে, তার জন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যন্ত প্রতে৵ক নেতা–কর্মী সজাগ থাকবে, দৃঢ় থাকবে। যেকোনো অপকর্ম প্রতিরোধ করবে—এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব।’
সরকারবিরোধীদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এই বিএনপি-জামায়াত ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল। তাদের ঘৃণা জানাতে হবে। তারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সরকারপ্রধান আরও বলেন, আগামীতে যদি একজন মানুষকেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত করে, তাহলে যে হাত দিয়ে আগুন দেবে, ওই আগুনে সেই হাত পুড়িয়ে দেওয়া হবে। যে হাতে মানুষ খুন করবে, তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হবে। এই কথাটা যেন সবার মনে থাকে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘তারা আন্দোলন করতে চায় আমরা বাধা দেব না। কিন্তু আন্দোলনের নামে যদি আবারও কোনো রকমের নাশকতা করে…। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নশীল দেশের ক্ষতিসাধন করতে চায়, আর্থসামাজিক ক্ষতি সাধন করতে চায়, তাহলে তাদের উপযুক্ত জবাব জনগণ দেবে।’
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অল্প কিছু আসন পেয়েছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘এটা বোধ হয় আপনাদের মনে থাকে না। ওই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিল। পরে উপনির্বাচনে একটি। এটিই ছিল তাদের শক্তি। সে জন্য তারা কোনো নির্বাচন চায় না বা ভিন্ন পথে ক্ষমতায় আসতে চায়।’
‘উন্নতি করেছে আওয়ামী লীগ’
দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, বিনা মূল্যে করোনার টিকা দেওয়াসহ অবকাঠামো উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তারা বলে আওয়ামী লীগ নাকি দেশের সর্বনাশ করেছে। মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন কি তাদের সর্বনাশ করা? এগুলো কি মানুষের ক্ষতিসাধন করা? তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে ক্ষতিটা দেখল কোথায়?’
আগামীতে গোপালগঞ্জে এলে আগে কোটালীপাড়ায় যাবেন বলে নেতা-কর্মীদের জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের নেতাদের টুঙ্গিপাড়া সফরের অনুরোধ জানান।
কর্মসূচি ঘোষণা
যৌথসভায় নতুন বছরের দলীয় কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয় এবং সেগুলো ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্যে রয়েছে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি।