ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইতিহাস গড়ে সিরিজ জয় বাংলাদেশের

ছবি: সংগ্রহীত

নিজেদের ডেরায় পেয়েও ইংল্যান্ডকে ওয়ানডেতে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে টি-টোয়েন্টিতে ঠিক উল্টো ঘটনা ঘটিয়েছে স্বাগতিকেরা। টানা দুই ম্যাচে জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করলেন সাকিব আল হাসানরা। এখন ধবলধোলাইয়ের অপেক্ষা। 

শেষ দিকে জফরা আর্চারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে একটু স্নায়ুচাপ তৈরি হলেও মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ইংলিশদের ৪ উইকেটে হারিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। এরে আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো ফরম্যাটেই সিরিজ জিততে পারেনি তারা। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ঐতিহাসিক সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। 

ইংল্যান্ডের আগে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। মিরাজের অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যে ইংল্যান্ডকে ১১৭ রানেই গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তর ৪৭ বলে ৪৬ রানের ধৈর্যশীল ইনিংসে ৭ বল হাতে রেখেই ১১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে বাংলাদেশ। মূলত মিরাজের জাদুকরী বোলিংয়ের সৌজন্যেই সফরকারীদের অল্প রানে আটকাতে পারে বাংলাদেশ। ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন এই অফ-স্পিনার। টি-টোয়েন্টিতে এটাই এখন তাঁর সেরা বোলিং। কোনো বাউন্ডারি তো দেনইনি; বরং ডট বলই দিয়েছেন ১৩ টি। ছিল না কোনো ওয়াইড-নো। ব্যাট হাতেও ১৬ বলে দুই ছক্কায় খেলেছেন ২০ রানের কার্যকরী এক ইনিংস। 

লক্ষ্যটা বেশ বড় না হলেও মিরপুরের কঠিন উইকেটে আজ এই স্কোর তাড়া করাই ছিল বাংলাদেশ ব্যাটারদের জন্য কঠিন পরীক্ষা। ইংল্যান্ডের মতো বাংলাদেশও নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকে। ২৭ রানেই দুই ওপেনারকে হারায় তারা। তৃতীয় ওভারে স্যাম কারান ফেরান লিটন দাসকে, ষষ্ঠ ওভারে জফর আর্চার শিকার করেন রনি তালুকদারের উইকেট। দুজনই আউট হয়েছেন ব্যক্তিগত ৯ রানে। 

তৃতীয় উইকেটে নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয় চাপ সামলে দলকে লক্ষ্যের দিকেই নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু অভিষিক্ত রেহান আহমেদ নিজের প্রথম ওভারেই হৃদয়কে শিকার করে ব্রেকথ্রু এনে দেন ইংল্যান্ডকে। ২৯ রান আসে শান্ত-হৃদয়ের জুটিতে। চতুর্থ উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজ ও শান্ত ৩২ বলে ৪১ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেন। ২০ রানে আর্চারের শিকার হন মিরাজ। এরপর সাকিব ও আফিফ হোসেন দ্রুত ফিরলেও বাকি কাজ সেরে ফেরেন শান্ত ও তাসকিন আহমেদ। ইংল্যান্ডের হয়ে আর্চার ৪ ওভারে ১৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট।

এর আগে শুরু থেকেই ইংল্যান্ডের ব্যাটিং অর্ডারকে চেপে ধরেন বাংলাদেশ বোলাররা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ডেভিড মালানকে ড্রেসিংরুমে ফেরান তাসকিন আহমেদ। থার্ড ম্যানে জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্যাচটি ধরেন হাসান মাহমুদ। এর পরও ফিল সল্ট ও মঈন আলীর ব্যাটে অনায়াসে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৫০ রান তোলে ইংল্যান্ড। কিন্তু এরপরই ৭ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট নিয়ে সফরকারীদের ব্যাটিং অর্ডারে রীতিমতো ধস নামান বাংলাদেশে বোলাররা। সপ্তম ওভারেই সাকিব আল হাসান বল ও ক্যাচে ফেরেন ওপেনার ফিল সল্ট। ১৯ বলে ২৫ রান করেছেন এ ব্যাটার। অষ্টম ওভারের শেষ বলে জস বাটলারের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি নেন হাসান মাহমুদ। আগের ম্যাচেও এই পেসারের শিকার ছিলেন বাটলার। আজ দারুণ এক ইয়র্কারে ইংল্যান্ড অধিনায়ককে বোল্ড করেন তিনি। 

৯ম ওভারে তিনে নামা মঈনকে ফিরিয়ে অতিথিদের চাপে ফেলে দেন মিরাজ। নিচু হয়ে আসা বলটা উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে শামীম হোসেনকে ক্যাচ দেন মঈন। ১৭ বলে ১৫ রান আসে তাঁর ব্যাট থেকে। দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারানোয় ৫ম উইকেটে বেন ডাকেট ও স্যাম কারানের কাঁধে এসে পড়ে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব। দুজনে দায়িত্ব ভালোই সামলাচ্ছিলেন, কিন্তু ১৫ তম ওভারে স্যাম কারান ও ক্রিস ওকসের উইকেট হারিয়ে ফের চাপে পড়ে যায় ইংলিশরা। সেই চাপ আর খুব একটা কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা। ২০ ওভার খেলে ঠিক ১১৭ রানেই অলআউট ইংল্যান্ড—যেটি পরে স্বচ্ছন্দে পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ। 

এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জেতা বাংলাদেশের সামনে এখন ইংল্যান্ডকে ধবলধোলাইয়ের সুযোগ। সিরিজের শেষ ম্যাচ পরশু।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.