পাকিস্তানের সংকটের নেপথ্যে

দৈনন্দিন আবশ্যকীয় চাহিদা মেটাতে হিমশিম নাগরিকদের। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিন এশিয়ার দেশ পাকিস্তান বর্তমানে আন্তঃসম্পর্কিত বেশ কিছু সংকটের মুখোমুখি। এসব সংকট দেশটির স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি হুমকিতে ফেলেছে। সমাজের সব স্তরে ফেলছে বিরূপ প্রভাব।

বিদেশি ঋণের কারণে পাকিস্তান ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়েছে। দেশটির মুদ্রা রুপির মূল্যমানের রেকর্ড পতন ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ে এবং জ্বালানি তেলের দাম আকাশচুম্বী। ফলে দেশটির নাগরিকেরা দৈনন্দিন আবশ্যকীয় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এদিকে জরুরি অবস্থার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের জোট আরও কিছু ইস্যু মোকাবিলা করছে।

একদিকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে গত বছরের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটে ইমরান খানের পরাজয়ের পর থেকে দেশটিতে চলছে রাজনৈতিক মতো বিরোধ। এ ছাড়া নিয়মিত বিরতিতে চলছে তালেবানের সন্ত্রাসী হামলা। সব মিলিয়ে দেশটি এখন বেশ ভঙ্গুর।

এদিকে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমেই খারাপ দিকে যাচ্ছে। এর পেছনে কাজ করছে বিপুল ঋণ, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি, জ্বালানির উচ্চ আমদানি ব্যয়, রাজনৈতিক উত্থান-পতন এবং জিডিপির ধারাবাহিক পতন।

ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশটির মূল্যস্ফীতি গত জানুয়ারিতে ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। এর কারণ, আমদানির ওপর সরকারের বিধিনিষেধের ফলে খাদ্য, কাঁচামাল এবং অন্য পণ্যসামগ্রীর হাজারো কনটেইনার বন্দরে অলস পড়ে আছে। সম্প্রতি দেশটির মূল্যস্ফীতি ২৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রশাসন এখন অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব ঠেকাতে সময়ের বিপরীতে কাজ করছে। মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের জীবনে যার বিপর্যয়কর প্রভাব পড়তে পারে। বিষয়টি এতটা গুরুতর যে সরকারকে একটি পাকিস্তানি দূতাবাসের সম্পত্তি যুক্তরাষ্ট্রে নিলাম ডাকতে হয়েছে।

অবনতিশীল অবস্থা সামলাতে সরকার আরও কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। দেশটির ৬২ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ বাঁচাতে কিংবা আনুমানিক ২৭৩ মিলিয়ন ডলারের জ্বালানি আমদানি খরচ কমিয়ে আনতে দোকানপাট, রেস্তোরাঁ, বিয়ের অনুষ্ঠান ও বিপণিবিতান স্বাভাবিক সময়ের আগেই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎ বিল ৩০ শতাংশ কমানোর কথা বলা হয়েছে। আবার অনেক জায়গা, বিশেষ করে লাহোরে আটার তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে সেখানে পণ্যটির দাম অনেক বেড়ে গেছে এবং বেশির ভাগ দোকানেই পণ্যটি মিলছে না।

দেশটির আজকের এই পরিস্থিতি এক দিনে তৈরি হয়নি। এসবের মূলে রয়েছে উপর্যুপরি সরকারের দুর্বল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা। বর্তমান সমস্যাটিকে প্রধানত দেশটির অভিজাতদের ‘আত্মঘাতী জখম’ হিসেবে দেখা যেতে পারে। 

অর্থনৈতিক কাঠামোগত দুর্বলতা
বস্ত্রশিল্প এবং ধান, আখ, তুলাসহ কয়েকটি কৃষিপণ্যই পাকিস্তানের অর্থনীতির প্রধান চালক। এ ছাড়া রয়েছে প্রবাসী আয়। এই গুটিকয়েক খাতের বাইরে দেশটি পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে নিজের অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে পারেনি। তার ওপর দেশটির জিডিপির একটা বড় অংশই সেনাবাহিনীর পেছনে ব্যয় করা হয়। বিশেষ করে ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছরই দেশটি প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়িয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে অন্যত্র।

২০২২ সালের বিপর্যয়কর বন্যা
২০২২ সালের বন্যা দেশটিকে আরও বড় ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে, যদিও আগে থেকেই অর্থনীতি ভুগছিল। বন্যায় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো ভেঙে পড়েছে। কয়েক মিলিয়ন লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা অর্থনীতির জন্য চাপের। তারও আগে করোনা মহামারি এবং তা প্রতিরোধে দেওয়া লকডাউনও অর্থনীতির ওপর বড় অভিঘাত হেনেছে। 

ইমরান খানের লোকরঞ্জনবাদ
বলা হয়ে থাকে, দেশটির সংকট তখনই শুরু হয়, যখন চীনা ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্যে বাড়তি তহবিল জোগাতে ইমরান খানের আগের প্রশাসন নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছিল। আইএমএফের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পাকিস্তানের মোট দ্বিপক্ষীয় ঋণ প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা দেশটির জিডিপির ২ শতাংশ।

অর্থনৈতিক কাঠামোগত দুর্বলতা
বস্ত্রশিল্প এবং ধান, আখ, তুলাসহ কয়েকটি কৃষিপণ্যই পাকিস্তানের অর্থনীতির প্রধান চালক। এ ছাড়া রয়েছে প্রবাসী আয়। এই গুটিকয়েক খাতের বাইরে দেশটি পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে নিজের অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে পারেনি। তার ওপর দেশটির জিডিপির একটা বড় অংশই সেনাবাহিনীর পেছনে ব্যয় করা হয়। বিশেষ করে ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছরই দেশটি প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়িয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে অন্যত্র।

২০২২ সালের বিপর্যয়কর বন্যা
২০২২ সালের বন্যা দেশটিকে আরও বড় ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে, যদিও আগে থেকেই অর্থনীতি ভুগছিল। বন্যায় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো ভেঙে পড়েছে। কয়েক মিলিয়ন লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা অর্থনীতির জন্য চাপের। তারও আগে করোনা মহামারি এবং তা প্রতিরোধে দেওয়া লকডাউনও অর্থনীতির ওপর বড় অভিঘাত হেনেছে। 

ইমরান খানের লোকরঞ্জনবাদ
পাকিস্তানের সংকট তখনই শুরু হয়, যখন চীনা ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্যে বাড়তি তহবিল জোগাতে ইমরান খানের আগের প্রশাসন নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছিল। আইএমএফের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পাকিস্তানের মোট দ্বিপক্ষীয় ঋণ প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা দেশটির জিডিপির ২ শতাংশ।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.