সন্ত্রাসী কার্যকলাপই ছিল বিএনপির উদ্দেশ্য: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ফাইল ছবি

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ব‌লে‌ছেন, নয়াপল্টনে পার্টি অফিসের ভেতরে বোমা রেখে সামনের রাস্তায় সমাবেশের জন্য এত দিন গোঁ ধরে থেকে বিএনপি প্রমাণ করেছে, ঢাকায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়, সন্ত্রাসী কার্যকলাপই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ এ কথা বলেন।

গত বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপি নেতা-কর্মী ও পুলিশের মধ্যকার সংঘর্ষের পর বিএনপি অফিস থেকে ১৫টি তাজা বোমা, ২ লাখ পানির বোতল, ১৬০ বস্তা চাল, রান্না করা খিচুড়ি, হাঁড়ি-পাতিল এবং দুই লাখ নগদ টাকা উদ্ধারের কথা জানান তিনি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। বিশেষ করে পুলিশের ওপর যখন হামলা হয়, রাস্তাঘাট বন্ধ করে বেআইনিভাবে যখন সমাবেশ করা হয়, তখন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকার বাধ্য হয়েছে। আমরা দুই সপ্তাহ ধরে বারবার বলেছি, আপনারা যাতে বড় সমাবেশ করতে পারেন, সে জন্য সরকার সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করবে। কিন্তু না, তাঁরা দেশে বিশৃঙ্খলা করার জন্য নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবেন। এটি তো সম্পূর্ণ ভাবে বেআইনি।’

শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সবাই করতে পারে এবং সরকার যদি সহায়তা না করত, নিরাপত্তা বিধান না করত, তাহলে বিএনপির পক্ষে কখনো দেশের নয়টি জায়গায় বড় সমাবেশ করা সম্ভব হতো না উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, দেশের সব কটি বিভাগীয় শহরে তারা সমাবেশ করেছে, সরকার তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে, সেখানে টুঁ-শব্দটুকু হয়নি। যেখানে একটু হয়েছে, সেখানে তারা নিজেরা নিজেরা চেয়ার-ছোড়াছুড়ি, মারামারি করেছে।

‘কিন্তু যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, আমরা বিরোধী দলে ছিলাম, তখন আমাদের সমাবেশ করতে দেওয়া হতো না’ বলেন সম্প্রচারমন্ত্রী।

মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস হুকুমদাতা
মির্জা ফখরুল-মির্জা আব্বাসের গ্রেপ্তার প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, ৭ তারিখ নয়াপল্টনে যে ঘটনা ঘটল, পুলিশের ওপর হামলা করা হলো, এগুলোর হুকুমদাতাও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাস। তাঁদের নেতৃত্বে এগুলো হয়েছে। আর তাজা বোমা নিয়ে যখন কেউ পার্টি অফিসে বসে থাকে, তখন যারা বসা ছিল সবাই তো অপরাধী, তারা তাজা বোমা নিয়ে কেন বসেছিল? এসব কারণে পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে।

তারেক রহমানের নির্দেশেই বিগড়ে বসে
লন্ডন থেকে তারেক রহমান বিশৃঙ্খলা ঘটাতে উসকানি দিচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে যে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে, এটি তারেক রহমানের নির্দেশেই তারা করেছে। বিএনপির নেতারা শুরু থেকেই রাজি ছিল, এমনকি পুলিশের সাথে প্রথম দুটো বৈঠকে বিএনপিই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের প্রস্তাব দিয়েছিল। তারেক রহমানের নির্দেশেই তারা বিগড়ে বসে। মিরপুরে পল্লবী, কালসী মাঠ, এজতেমার ময়দান, বাণিজ্য মেলার মাঠ এমন চার-পাঁচটি বিকল্প প্রস্তাবও তারা উপেক্ষা করে।’

তদন্ত হবে
ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বার্তার প্রশ্নে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত ৭ তারিখের ঘটনা নিয়ে তদন্তের কথা বলেছেন। অবশ্যই তদন্ত হবে। পুলিশ তো বিএনপি অফিসে বোমা পেয়েছে। কারা বোমা রেখেছিল, কারা বোমা বানিয়েছিল, বানানোর টাকা কারা দিয়েছিল, পুলিশের ওপর কীভাবে হামলা করেছিল। এগুলো তদন্তে বেরিয়ে আসবে, পুলিশের কোনো ভুল থাকলে সেটাও তদন্তে বেরিয়ে অসবে। সরকার শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নিশ্চিত করেছে, সেই কারণেই বিএনপি সারা দেশে নয়টি বড় সমাবেশ করতে পেরেছে এবং ঢাকায়ও যাতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে পারে, সে জন্য সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়াও বিকল্প চারটি প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু পার্টি অফিসে বোমা রাখা, পুলিশের ওপর ইটপাটকেল মারা, হামলা করা, বেআইনিভাবে রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করা এগুলো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ দিয়ে হাছান বলেন, ‘সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা ক্যাপিটল হিলে হামলা করেছিল। সেটি যেমন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়, সেটার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে যেমন তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং করছে, মামলাও পরিচালিত হচ্ছে, এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও অভিযুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে, এখানেও ৭ তারিখের ঘটনা তার সাথে তুলনীয় যে এটাও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ।’

গণমাধ্যমের রাজনীতি করা সমীচীন নয়  
এ সময় কিছু গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক ভূমিকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যমের দায়িত্ব হচ্ছে সমাজের চিত্র ফুটিয়ে তোলা। একপেশে সংবাদ পরিবেশন করা গণমাধ্যমের কাজ নয়। সেই ক্ষেত্রে গণমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যায়। কোনো গণমাধ্যমেরই রাজনীতি করা সমীচীন নয়। আমি আশা করব, যাঁরা এগুলো করছেন, তাঁরা রাজনীতি করবেন না, গণমাধ্যম হিসেবেই কাজ করবেন। সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে, তার মানে মানুষকে মিস-লিড করার অপচর্চা কোনোভাবেই সমীচীন নয়।’

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.