সাদিকের ভয়ে ভোটের মাঠে নামছেন না নেতা-কর্মীরা

সাদিক আবদুল্লাহ। ফাইল ছবি

সময় ঘনিয়ে আসছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বসিক) নির্বাচনের তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ পক্ষে ভোটের প্রচারণায় নামেননি অধিকাংশ নেতা-কর্মী। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ করেন, বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহর ভয়ে তাঁরা প্রকাশ্যে ভোটের মাঠে নামতে পারছেন না। আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে সমর্থনের বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে পদপদবি হারানোর ঝুকিতে আছেন অনেকে। তবে রাতের আঁধারে মেয়র পদপ্রার্থী খোকনের বাসায় লাইন ধরে দেখা করছেন তাঁরা।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যের কমিটি ও ৩০টি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের অনেকটা আড়ালে রেখেছেন। পদ হারানোর ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে কাজ করছেন না। এ কারণে বিভিন্ন সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন খোকন সেরনিয়াবাত। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন মেয়র পদপ্রার্থী খোকন। খোকনের ঘনিষ্ঠজনেরা জানান, নির্বাচনী কার্যক্রমে মহানগরের নেতাদের অসহযোগিতার বিষয়টি দলীয় প্রধানকে জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি কমিটি ভেঙে দেওয়ার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা মোহন বলেন, ‘খোকন সেরনিয়াবাত সোমবার রাতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে আলাপ করতেই গেছেন। কেননা এই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি থাকলে ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবেন না। তাঁদের মধ্যে ভয়, জড়তা আর আনুগত্য কাজ করছে।’

এর আগে ২০১৩ সালে বরিশাল সিটি নির্বাচনে সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন হিরণের পরাজয়ের পেছনে দলের একটি অংশের বিশ্বাসঘাতকতাকে দায়ী করেন অনেকেই। এ কারণে খোকনের অনুসারীরাও তাঁর জয়ের ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করছেন, কেন্দ্রের চাপে সাদিক তাঁর লোকজন নিয়ে ভোটের মাঠে নামলেও তাঁদের ওপর বিশ্বাস রাখা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রয়াত মেয়র হিরণের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন বিএম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মঈন তুষার। এসব বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যারা নগরবাসীকে শোষণ করছে, চাঁদাবাজি করছে, তাদের হাতে মহানগর আওয়ামী লীগ থাকতে পারে না। নেতা-কর্মীদের চাপের মুখে রেখেছেন সাদিক। তাঁর ভয়ে নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে সামনে আসতে পারছেন না। এই কমিটি বলবৎ থাকলে হিরণ ভাইয়ের মতো ট্র্যাজেডি ঘটতে পারে।’

প্রায় নেতা-কর্মী শূন্য ভোটের মাঠের কারণ জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু পরিষদ (বরিশাল মহানগর) সভাপতি মো. এ কে আজাদ ফারুক বলেন, ‘আমার পাশের এলাকার ওয়ার্ড সভাপতি জসিম উদ্দিনকে ভোটের মাঠে নামতে বলেছিলাম। কিন্তু জসিম আমাকে জানান, তাঁরা সাদিকের অপেক্ষায় আছেন। আসলে নগর ও ওয়ার্ড কমিটির নেতারা তাঁদের পদ হারানোর ভয়ে এখনো প্রকাশ্যে সামনে আসছেন না।’

গুঞ্জন উঠেছে ভোটের আগে আগেই নগর কমিটি ভেঙে দেওয়া হতে পারে। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, সম্মেলন অনুযায়ী মেয়াদ ওভার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের সূত্রে মেয়াদ শেষ হয়নি।

আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষে নেতা-কর্মীদের মাঠে কাজ করার বিষয়ে দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমরা মেয়র প্রার্থীকে নিয়ে ইতিমধ্যে নাগরিক সভা করেছি। ঈদের পর আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে বর্ধিত সভায় নির্বাচনী কৌশল নেওয়া হবে।’ মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনো কমিটির মেয়াদ তিন বছর। মহানগরের সম্মেলনের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। যৌক্তিক সময়ে এর সম্মেলন আয়োজন করা হবে।’

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.