সবচেয়ে কষ্টে আছে আমাদের শ্রমজীবী মানুষ: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “আজকে সবচেয়ে কষ্টে আছে আমাদের শ্রমজীবী মানুষ, আজকে সবচেয়ে কষ্টে আছে আমাদের খেটে খাওয়া মানুষ। তারা দুইবেলা দু’মুঠো খেতে পায় না। তাই আমাদের নিজেদের স্বার্থে, বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে, শ্রমিকের স্বার্থে, শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে, কৃষকের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে।”

সোমবার (১ মে) বিকালে মে দিবসের এক শ্রমিক সমাবেশে দেশের শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা তুলে ধরে তিনি এই আহ্বান জানান।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেরকে (সরকার) পরাজিত করতে হবে। আজকে আমাদের শ্রমিক স্লোগান দিয়েছে- ‘মে দিবসের অঙ্গীকার, রুখতে হবে স্বৈরাচার’। কারণ গণতন্ত্র যদি প্রতিষ্ঠা না হয়, স্বৈরাচার দূর করা না যায়- তাহলে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করা যাবে না, তাদের অধিকার আদায় করা যাবে না।”

বর্তমান সরকারকে ‘অনির্বাচিত’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “এই সরকার শুধু শ্রমিক নয়, কৃষক নয়; আজকে সমগ্র দেশের মানুষ সবচেয়ে বড় বিপদের সম্মুখিন হয়েছে। একটা দানব, একটা মনস্টার- তারা আমাদের দেশের সবকিছুকে তছনছ করে দিচ্ছে, সব প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে দিচ্ছে, গণতন্ত্রকে নষ্ট করে দিচ্ছে, আমাদের সমস্ত ভবিষ্যতকে নষ্ট করে দিচ্ছে।”

বিএনপির আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে দলটির মহাসচিব ফখরুল বলেন, “আমরা দেশের মানুষের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে ১০ দফা দিয়েছি। এর প্রধান শর্ত হচ্ছে- এই গণতন্ত্র বিরোধী সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং একটা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তাদের মাধ্যমে নির্বাচন করে জনগণের সরকার, শ্রমিকদের সরকার, কৃষকদের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

সরকারবিরোধী আন্দোলনে সবাইকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এই লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লড়াই। এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই সিদ্ধান্ত হবে যে, আগামী দিনে বাংলাদেশ স্বাধীন থাকবে কি থাকবে না, আমাদের মানুষ মুক্ত হবে কি হবে না।

“তাই এবারকার লড়াই আমাদের স্বাধীনতার লড়াই, এবারকার লড়াই আমাদের মুক্তির লড়াই, এবারকার লড়াই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বের করে নিয়ে আসার লড়াই, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবার লড়াই, আর শ্রমিক ভাইদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এটা নিয়েও তারা (ক্ষমতাসীনরা) কত বড় অমানবিক যে, তাদের একজন মন্ত্রী বলছে এটা নাকি রাজনীতি করছি আমরা।

“ধিক্কার দেই তাদেরকে। যারা একজন অসুস্থ নেত্রীকে নিয়ে এই ধরনের কথা বলতে পারে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দেশনেত্রীকে আপনারা (সরকার) চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছেন, বাইরে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন না, মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক করে রেখে দিয়েছেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছেন দীর্ঘ ১৪/১৫ বছর ধরে, দেশে তাকে আসতে দিচ্ছেন না।

“আমাদের ৬০০ নেতা-কর্মীকে গুম করে দিয়েছেন, হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছেন, ৪০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে হয়রানি করছেন। আবার হুমকি দেন যে, অগ্নি সন্ত্রাস করতে দেওয়া হবে না। অগ্নি সন্ত্রাস তো করেন আপনারা হোটেল শেরাটনের কাছে বাসে গান পাউডার দিয়ে মানুষ হত্যা ও পল্টনে মানুষের পিটিয়ে হত্যার ঘটনা দেশের মানুষ ভুলে যায়নি।”

কারাগারে আটকে সকল নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।

মে দিবসে সমাবেশে লোক সমাগমের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে এই সমাবেশ প্রমাণ করছে যে, বাংলাদেশ এখন জনগণের বাংলাদেশ, বাংলাদেশ এখন মুক্তির বাংলাদেশ, বাংলাদেশ এখন গণতন্ত্রের বাংলাদেশ।

“আসুন, আজ পহেলা মে থেকে শ্রমিক দলের সমাবেশের মধ্য দিয়ে নতুন সংগ্রাম শুরু হল, এই নতুন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এদেরকে পরাজিত করব এবং জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করে নতুন সরকার গঠন করব-এই হোক আজকে আমাদের শপথ।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “এই সরকার গণতন্ত্রবিরোধী সরকার, এই সরকার গণবিরোধী সরকার। আজকে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে, আজকে তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, ভয় দেখিয়ে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। আদালতকে তারা পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ করার চেষ্টা করেছে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “পুলিশের আইজি সাহেব, তিনি বলেছেন, নির্বাচনের পূর্বে কোনো রকমের গোলযোগ বরদাশত করা হবে না। গোলযোগ কোথায় দেখছেন? গোলযোগ তো সৃষ্টি করছেন আপনারা। আজকে খুলনায় শ্রমিক দলের শান্তিপূর্ণ র‌্যালির উপরে হামলা করে সেটাকে পণ্ড করে দিয়েছেন এবং সেখান থেকে শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদককে গ্রেপ্তার করেছেন, আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

“আবার সেই পুরনো কায়দায় তারা আরেকটা নির্বাচন করতে চায়। আবার সেই ভোটাররা যেন ভোট দিতে না পারে, আবার ভোট চুরি করে যেন ক্ষমতায় আসতে পারে এবং আবার তারা যেন ক্ষমতা দখল করতে পারে সেজন্য এখন থেকেই তারা হুমকি দিয়ে জনগনকে ভয় দেখাতে চায়, দমন করতে চায়।”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানুষের বাক স্বাধীনতাকে ‘বন্ধ করে রাখার’ বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির শ্রমিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে মে দিবস উপলক্ষে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর নেতারা শ্রমিকদের নিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে।

কর্মক্ষেত্রে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস স্মরণে সারাবিশ্বের মত সোমবার বাংলাদেশেও এই ঐতিহাসিক মে দিবস পালিত হচ্ছে।

ঢাকার আশপাশের শিল্পাঞ্চলগুলো থেকে হাজার হাজার শ্রমিক মাথায় লাল ফিতা বেঁধে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে মিছিলসহকারে এই সমাবেশে যোগ দেয়। কাকরাইল নাইটেঙ্গল রেঁস্তোরার মোড় থেকে ফকিরেরপুল মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক জনসমুদ্রে রূপ পায়।

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জুর যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, হুমায়ুন কবীর খান, ফিরোজ-উজ-জামান, শ্রমিক দলের সালাহউদ্দিন সরকার, আবুল কালাম আজাদ, মেহেদি হাসান খান, মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, সুমন ভুঁইয়া, কাজী শাহ আলম রাজা, বদরুল আলম, কামরুন জামান।

সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, তাঁতী দলের আবদুল কালাম আজাদ, মতস্যজীবী দলের আবদুর রহীম, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ।

এ সমাবেশে বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, জয়নুল আবেদীন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, শাহ আবু জাফর, খায়রুল কবির খোকন ফজলুল হক মিলন, শ্যামা ওবায়েদ, মীর সরাফত আলী সপুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.