ডিএসএ বাতিলসহ সাংবাদিকদের সুরক্ষা আইনের দাবি সম্পাদক পরিষদের 

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় ডিএসএ বাতিলসহ সাংবাদিকদের সুরক্ষা আইনের দাবি জানানো হয়। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, নইলে সাংবাদিক এবং মুক্ত মত প্রকাশকারীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে না—এমন ধারা যোগ করার দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষার জন্য নতুন আইনেরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে সাংবাদিকসহ মত প্রকাশের ব্যাপারে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ব্যাহত করা হচ্ছে। শুধু আইনেই নয়, সরকার, গোয়েন্দা সংস্থা, প্রশাসনসহ নানাভাবে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থায় ভিন্নমত প্রকাশ করতে দেওয়া হবে না, দেবেও না। যে আইনের জন্য সবাইকে ভুগতে হচ্ছে, অনুনয় করে লাভ হবে না। সরকারের মন্ত্রী, এমপি পর্যায় থেকে বারবার বলা হয়েছে সংশোধন করা হবে, কিন্তু হয়নি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সঙ্গে নিয়ে জনগণকে সমন্বয় করে আন্দোলন করতে হবে।

প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশে মত প্রকাশের যথেষ্ট স্বাধীনতা আছে। বুঝে নেন, ওইভাবে বলতে পারছি না। সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে বলা আছে, কিন্তু কীভাবে ক্ষমতাসীনেরা বিরক্ত হবেন না, সেটার ব্যাখ্যা পরিষ্কার করা নেই। যে কারও বিরুদ্ধে যেকোনো সময় ডিএসইতে মামলা হতে পারে।

সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রশ্ন তোলেন, ‘কিছু গণমাধ্যম রাজাকারের পক্ষে, সামরিক শাসনের পক্ষে কাজ করছে। গণতন্ত্রবিরোধীদের পক্ষে কথা বলছে। এটা কি স্বাধীনতার পক্ষে যায়? ডিএসএ কি সাংবাদিকতার একমাত্র বিপদ? এর বাইরে করপোরেট দুনিয়া, প্রশাসন, বিভিন্ন বাহিনী মালিকপক্ষ যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, গণমাধ্যমকে তা নিয়ে ভাবতে হবে। বিজ্ঞাপন আসবে না, তাই অনেক ক্ষেত্র নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন না আপনারা। নানা সময়ে গোয়েন্দারা যেভাবে বিধিনিষেধ দেয়, সেগুলো আপনারা প্রকাশ করেন।’

ভুল বার্তা আমাদের ক্ষতি করছে উল্লেখ করে ইনু বলেন, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য কোনো দর-কষাকষি চলতে পারে না। সাইবার জগতে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, একই সঙ্গে বাক্‌স্বাধীনতাও নিশ্চিত করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে হাসানুল হক ইনুর বক্তব্যের কিছু অংশের বিরোধিতা করেন ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম। কোন কোন গণমাধ্যম অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করেছে, সামরিক শাসনের জন্য কাজ করে সরকারকে বিব্রত করেছে, তার প্রমাণ চান তিনি। গণমাধ্যম সম্পর্কিত আইনগুলোতে সংশ্লিষ্টদের অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি জানান ডেইলি স্টারের সম্পাদক।

সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি জানানো হয় আলোচনা সভায়। মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাহত হয় এমন সব আইনি ধারা স্থগিত করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিলুপ্ত করতে হবে, অন্যথায় এ আইন স্বাধীন সাংবাদিকদের এবং মুক্ত মত প্রকাশকারীদের জন্য প্রযোজ্য নয় এমন ধারা যোগ করতে হবে। এখন পর্যন্ত ডিএসএতে যত মামলা এবং গ্রেপ্তার হয়েছে, সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। মামলা প্রত্যাহার করতে হবে বলেও দাবি জানান তিনি।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মনজু, ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন ও বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.