ঢাকায় জাল সার্টিফিকেট তৈরির কারখানা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকসহ গ্রেপ্তার ৪

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর লালবাগ থানার বড়ঘাট মসজিদ এলাকার কাশ্মীরি গলির একটি বাড়ি। এই বাড়িটির দুটি কক্ষই স্কুল, কলেজ ও ডিপ্লোমা কোর্স—এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষাসনদ, মার্কশিট তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে! কক্ষ দুটিতে রয়েছে কম্পিউটার, প্রিন্টার থেকে শুরু করে সনদ তৈরিতে প্রয়োজনীয় সবকিছু। এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, চক্রটি দীর্ঘদিন মোটা অঙ্কের বিনিময়ে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে আসছিল। আর এই চক্রে প্রকৌশলী ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক জড়িত। জাল সনদের ব্যবসা করে তাঁরা বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন। 

আজ শুক্রবার দুপুরে জাল সনদ তৈরি ও বিক্রি চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান। 

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান এবং তাঁর স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতুকে গ্রেপ্তার করে ডিবির লালবাগ বিভাগ। এ সময় তাঁদের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ একাডেমিক সনদ, মার্কশিট, এনভেলপ ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। 

তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ সকালে লালবাগের ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসিন আলী ও দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক বুলবুল আহমেদ বিপুকে। এ সময় বাসাটিতে জাল সনদ তৈরির যন্ত্রপাতি ও উপকরণ পাওয়া যায়। 

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দেখতে পান, দুই কক্ষবিশিষ্ট বাসাটিতে দামি ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানার ও এমবস মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি থেকে সংগ্রহ করা খালি মার্কশিট ও সনদের।

কর্মকর্তারা জানান, চক্রটি দুই ধরনের সনদ সরবরাহ করত। কোনো রকমের ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হবে না—এ রকম সার্টিফিকেট, মার্কশিট, টেস্টিমোনিয়াল সরবরাহ করত। আবার দেশে–বিদেশে অনলাইনে ভেরিফিকেশন করা যাবে এমন সনদও সরবরাহ করত। আর যাচাই–বাছাইয়ে যেন ধরা না পড়ে, সে জন্য চক্রটি তাদের দলে ভিড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ও বোর্ডের বেশ কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের। তাঁরা টাকার বিনিময়ে অনলাইনে জাল সনদের নম্বর সরবরাহ করতেন। 

চক্রের বিষয়ে ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ‘চক্রটি মাত্র ১০০ টাকায় একটি সনদ তৈরি করে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করত। আমরা ধারণা করছি, অন্তত কয়েক হাজার মানুষের কাছে সনদ বিক্রি করেছে তারা। দীর্ঘদিন জাল সনদ বিক্রির কথা তারা স্বীকার করেছে। চক্রের সদস্যরা এর আগে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছে।’ 

মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘এই চক্রের অন্যতম হোতা প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান। জাল সনদ বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করেছেন। এই টাকা দিয়ে বিলাসবহুল জীবন যাপন করেন। খুলেছেন ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান। কিনেছেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। গ্রেপ্তার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসিন আলী বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে সব রকমের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসংবলিত অতি সূক্ষ্মভাবে জাল সনদের কাগজ ছাপিয়ে আনতেন। তিনি নিজেও বিভিন্ন গ্রাহকদের জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, টেস্টিমোনিয়াল ও ট্রান্সক্রিপ্ট দিতেন।’ 

কতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা এই চক্রে জড়িত জানতে চাইলে মশিউর রহমান বলেন, ‘ইনডিপেনডেন্ট ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রায় সব কটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন কারিগরি ও ডিপ্লোমা বোর্ডের সনদ তারা বানায়। আমরা হাতেনাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালককে গ্রেপ্তার করেছি। তদন্ত করে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। নুরুন্নাহার মিতু ব্যতীত গ্রেপ্তারকৃত অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে।’

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.