নির্বাচনের আগেই চমক দেখাবে ঢাকার উড়াল সড়ক

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগেই চমক দেখাবে। ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকার এ প্রকল্প শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি হয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকায় গিয়ে শেষ হবে। রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনের জন্য এটিই হচ্ছে সরকারের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। তিনধাপে নেওয়া এ প্রকল্পের প্রথম অংশ বিমানবন্দর থেকে থেকে তেজগাঁও অংশটি চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে চালু হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে এ অংশের ৯৭ দশমিক ১৭ শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে বিমানবন্দর, বনানী, মহাখালী অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়েছে। তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর ও সায়েদাবাদ অংশের কার্যক্রম চলছে। রেললাইনের উপর দিয়ে ভারী ভারী যন্ত্রের মাধ্যমে বসানো হচ্ছে পাইল। দিন রাতের কোন সময়েই নেই কাজ বন্ধ। সকাল সাড়ে ৬ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত প্রথম শিফট এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা থেকে ভোর পর্যন্ত দ্বিতীয় শিফটে চলছে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ।

সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণের সুবিধার্থে প্রকল্পটি তিনটি ট্রাঞ্চে ভাগ করা হয়েছে। ট্রাঞ্চ-১. বিমানবন্দর-বনানী-রেলস্টেশন পর্যন্ত এর মোট দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। এ অংশের অগ্রগতি ৯৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। ট্রাঞ্চ-২. প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার। বনানী রেলস্টেশন-মগবাজার অংশের অগ্রগতি ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত। ট্রাঞ্চ-৩. মোট দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার। এ অংশের কাজের অগ্রগতি ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। সবমিলিয়ে এ প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য হবে ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুরু হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের কুতুবখালীতে শেষ হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। 

এ প্রকল্প নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এ প্রকল্পের সর্বশেষ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। ৩১টি র‌্যাম্পসহ ২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ওভারপাসসহ মোট ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারজুড়ে এ পথ নির্মাণ করা হচ্ছে। ১২ বছরে এ প্রকল্প সংশোধন হয়েছে পাঁচবার। ব্যয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে চার গুণ। সব শেষ মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। সেইসাথে এ প্রকল্পের কারণে পান্থকুঞ্জ পার্ক নষ্ট করার পাশাপাশি পলাশী পর্যন্ত বিদ্যমান রাস্তার উপযোগিতাও নষ্ট হবে এবং এ এলাকার মানুষজনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে। 

তিনি আরো বলেন, রাজধানীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প শুরু থেকেই অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, যা জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের আইন, পরিকল্পনা ও যথাযথ পদ্ধতির তোয়াক্কা না করে হাতিরঝিলের জলাধার ভরাটের মাধ্যমে পরিবেশ ধ্বংস করেছে। বিশদ পরিকল্পনাগত প্রভাব বিশ্লেষণ ছাড়াই ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা হাতিরঝিল প্রকল্পের সার্বিক লক্ষ্য ও উপযোগিতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প সড়ক হিসাবে কাজ করবে। এটি হেমায়েতপুর-কদমতলী-নিমতলী-সিরাজদিখান-মদনগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-মদনপুরে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চল ও পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করবে। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলোও ঢাকাকে পাশ কাটিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে। ফলে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট কমবে। 

সরকারের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (আরএসটিপি) তথ্যানুযায়ী, এক্সপ্রেসওয়েটিতে ১১টি টোল প্লাজা থাকবে। যার পাঁচটিই এক্সপ্রেসওয়ের উপরে। এর উপর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে। যোগাযোগ ব্যয় ও ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। কমবে ভ্রমণের সময় ও খরচও। যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজীকরণ ও আধুনিকায়নের পাশাপাশি এ প্রকল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।

তবে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন ও পরিবেশবিদদের উদ্বেগের কোন কারণ নেই উল্লেখ করে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক এ এইচ এম শাখাওয়াত আখতার নিউজনাউকে বলেন, সৌন্দর্য রক্ষায় সমন্বয় করে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করা হবে। হাতির ঝিলের যে অংশ দিয়ে আমাদের কাজ, সে অংশ দিয়ে কাজ করতে বর্তমানে কোন বাধা নেই। সৌন্দর্য বর্ধনসহ মোট ৩৮টি ছোটখাট কাজ করা হবে। এরমধ্যে বাইসাইকেল লেন, ফুটপাত, বাগানসহ অনেক কিছু করা হবে। এতে পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না। সুয়ারেজ লাইন ও ঝিলের সৌন্দর্য অক্ষত রেখেই কাজ চালিয়ে যাব আমরা।

প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, র‌্যাম্প স্থাপনের বিষয়ে ডিএসসিসি ও রাজউকের যে আপত্তি ছিল তা সমাধান হয়েছে। আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগে একটা চমক দেখাতে পারব। কারণ ইতোমধ্যে বনানী থেকে মালিবাগ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। দিনরাত কাজ চলমান রয়েছে।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.