বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: আবাসনসহ নানা সংকটে চার হলে অসন্তোষ

বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে পানির তীব্র সংকট চলছে। গত শুক্রবার জুমার নামাজের আগে ছাদে বালতি নিয়ে প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের। ছবি: সংগৃহীত

আবাসনসংকট, পানিসংকট, খাবারের মান ও দামে অসন্তোষ। রাত নামলেই নিরাপত্তাহীনতা। এমন নানা সমস্যায় জর্জরিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া আবাসিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রূঢ় আচরণের অভিযোগ উঠেছে। সংকট সমাধানে এক পক্ষ ১৫ দফা দাবি তুলেছে। আরেক পক্ষ পানির বালতি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের আবাসিক সুবিধা মেটাতে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করেনি।

শেখ হাসিনা হল
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলটির ৪৫০ জন ছাত্রী ৩ আগস্ট আবাসিক সমস্যার ১৫ দফা লিখিত দাবি তুলে ধরেন উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকুল আরেফিনের কাছে। ছাত্রীরা উল্লেখ করেছেন, তাঁরা ছাত্রী-নিবাসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হলে সাপের আতঙ্ক, বিভিন্ন তলায় বল্লার চাক, বনজঙ্গলে অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। রাতে হলের সড়কে বাতি জ্বলে না। হলটিতে পানির সংকট এবং খাবারের মান ও দাম নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন ছাত্রীরা।

ছাত্রীরা আরও উল্লেখ করেছেন, ‘আবাসিক শিক্ষকেরা যেমন দায়িত্বে অবহেলা করছেন, তেমনি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আচরণ প্রচণ্ড খারাপ।’ একাধিক ছাত্রী জানান, আবাসিক শিক্ষকেরা কেউ রাতে হলে থাকেন না। এটাই তাঁদের নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ।

জানতে চাইলে শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট ড. রেহানা পারভিন বলেন, ছাত্রীদের ১৫ দফা দাবির বিষয়ে উপাচার্য ডেকে তাঁকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। ওই দিনই তিনি আবাসিক শিক্ষকদের নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। সাপ-আতঙ্ক রোধে অ্যাসিড প্রয়োগ করা হয়েছে। ঝোপঝাড় কাটা হচ্ছে। মাঝে মাঝে পানির সংকট দেখা দেয়। খাবারের মান ও দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভর্তুকির বিষয় কেন্দ্রীয়ভাবে দেখা হতে পারে।

ফজিলাতুন নেছা হল
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা হলেও ছাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কারণ আবাসিক শিক্ষকদের রাতে পাওয়া যায় না। অপরিচ্ছন্নতার কারণে সাপ ও মশার প্রকোপ বেড়েছে। এ হলেও খাবারের মান ও দাম নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। 

বঙ্গবন্ধু হল
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। গত শুক্রবার জুমার নামাজের আগে ছাদে বালতি নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা। হলের ছাত্ররা জানান, প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তা ছাড়া তাঁরা যে প্যাকেজে মিল গ্রহণ করেন, তাতে দুপুরের খাবার ৪৫ টাকা। এর চেয়ে ক্যাম্পাসের সামনের হোটেলে কম টাকায় ভাত খাওয়া যায়। গত ৩১ জুলাই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে যে ১৭ দফা তুলে ধরেন, তার অন্যতম ছিল ২০ টাকায় হলে এক বেলা খাবার খেতে ভর্তুকি দেওয়া।

বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট আরিফ হোসেন বলেন, হলে পানির সমস্যা আছে। ট্যাংকে পর্যাপ্ত পানি ধরে না। তিনি আরসিসি ট্যাংক করার জন্য চিঠি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষকে। তাঁর মতে, হলে ২৫০ আসনের বিপরীতে ছাত্র থাকেন ৫০০ জন। এ কারণে পানির সংকট। খাবারের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থ না দিলে কী করে শিক্ষার্থীদের আবাসিক খাতে ভর্তুকি দেওয়া যাবে!

শেরে বাংলা হল
এই হলের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাঁদের প্রধান সমস্যা আবাসনসংকট। এখানে একই বিছানায় দুজন এবং এক রুমে আটজনকে থাকতে হয়। মশার যন্ত্রণায় তাঁরা অতিষ্ঠ। দুপুরের খাবার হলে ৪৫ টাকা প্যাকেজে পান তাঁরা। হলের কেয়ারটেকার কিবরিয়া বেলা ১টার পর কর্মস্থলে আসেন।

প্রভোস্ট আবু জাফর মিয়া বলেন, কচুরিপানায় ভরা ডোবাগুলো ভরাট করলে মশার উপদ্রব কমত। পানিসংকট সমাধান করতে হলে পুকুর সংস্কার দরকার। কেয়ারটেকার কিবরিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্দিষ্ট খাতায় অভিযোগ করতে বলেছি।’

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম বলেন, ইতিমধ্যে প্রভোস্টরা গিয়ে হাউস টিচারের সঙ্গে কথা বলেছেন। বেশির ভাগ শিক্ষক শহরে থাকায় ক্যাম্পাসে কম থাকেন। শিক্ষার্থীরা রাতে শিক্ষকদের পাশে পান না। এ কারণে অসন্তোষ থাকতে পারে। হলগুলোতে পানির সংকট মোচনে প্রকৌশল শাখাকে অবহিত করা হয়েছে। আর খাবারের ভর্তুকি দেওয়ার মতো বাজেট নেই।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.