একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি মোহাম্মদ রফিক আর নেই

ছবি: সংগৃহীত

একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি মোহাম্মদ রফিক আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে আজ রোববার রাত ৯টার দিকে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি দুই ছেলে এক স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

কবির গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের চিতলীতে আজ রোববার সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে বাগেরহাট এবং পরে বরিশাল নেওয়া হয়। বরিশালের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে বিভিন্ন পরীক্ষার পর হার্টের সমস্যাসহ বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকেরা তাকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। 

আজ রোববার সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা কবিকে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রওনা হওয়ার পর পথেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। 

বেলায়েত হোসেন ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ও কবির চাচাতো ভাই মো. শিবলী হাওলাদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তার মরদেহ বাগেরহাটে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে দাফনের ব্যবস্থা করা হবে। মোহাম্মদ রফিক দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগসহ শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।

কবি মোহাম্মদ রফিক ১৯৪৩ সালের ২৩ অক্টোবর বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের বৈটপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সামছুদ্দীন আহমদ এবং মাতা রেশাতুন নাহারের আট সন্তানের মধ্যে মোহাম্মদ রফিক সবার বড়। মোহাম্মদ রফিকের শৈশব কাটে বাগেরহাটে। মেট্রিক পাশ করে ঢাকার নটরডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু পরে ঢাকা কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর রাজশাহী সরকারি কলেজে ইরেজি বিভাগে ভর্তি হন এবং স্নাতক শেষ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. ডিগ্রি লাভ করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি পাকিস্তানের সামরিক শাসন বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। পাকিস্তানের সামরিক আদালত তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু এম. এ. পরীক্ষার জন্য তিনি ছাড়া পান। ১৯৭১ সালে তিনি প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের ১ নম্বর সেক্টরে এবং পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করার পর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে যোগ দেন। তিনি ২৯ জুন ২০০৯ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ২০১০ সালে একুশে পদক লাভ করে। 

একজন মননশীল আধুনিক কবি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া মোহাম্মদ রফিক খুলনা জেলা স্কুল থেকে ১৯৫৮ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। কবি হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ১৯৬০-এর দশকে। ১৯৭০ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বৈশাখী পূর্ণিমা’ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৬ সালে প্রকাশ পায় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধুলার সংসারে এই মাটি’।

কবির উল্লেখযোগ্য অন্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো- কীর্তিনাশা (১৯৭৯), খোলা কবিতা ও কপিলা (১৯৮৩), গাওদিয়ায় (১৯৮৬), স্বদেশী নিশ্বাস তুমিময় (১৯৮৮), মেঘে এবং কাদায় (১৯৯১), রূপকথা কিংবদন্তি (১৯৯৮), মৎস্য গন্ধ্যা (১৯৯৯), মাতি কিসকু (২০০০), বিষখালি সন্ধ্যা (২০০৩), নির্বাচিত কবিতা (২০০৩), কালাপানি (২০০৬), নির্বাচিত কবিতা (২০০৭), নোনাঝাউ (২০০৮), দোমাটির মুখ (২০০৯), ত্রয়ী (২০০৯), মোহাম্মদ রফিক রচনাবলী-১ (২০০৯), মোহাম্মদ রফিক রচনাবলী-২ (২০১০)।

কবিতার পাশাপাশি তার গদ্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ভালবাসার জীবনানন্দ (২০০৩), আত্মরক্ষার প্রতিবেদন (২০০১), স্মৃতি বিস্মৃতির অন্তরাল (২০০২)।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.