বগুড়ায় মজুত রাখা ৪০ হাজার কেজি আলু মাইকিং করে ৩৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় হিমাগারে মজুত করা ৪০ হাজার ৫০০ কেজি (৬৭৫ বস্তা) আলু প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ৩৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এই আলু বিক্রির ঘোষণা দিয়ে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মহাস্থান বাজারে মাইকিংও করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সরকার–নির্ধারিত দামে আলু কিনতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন ক্রেতারা।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গতকাল শিবগঞ্জের সাহা হিমাগার লিমিটেড এবং হিমাদ্রি লিমিটেড হিমাগারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যে সাহা হিমাগারে মজুত করা পরিতোষ কুমার নামের একজন ব্যবসায়ীর ১৯০ বস্তা, অর্জুন সরকারের কাছে ২৮৫ এবং হিমাদ্রি হিমাগারে আফজাল হোসেন নামের একজন ব্যবসায়ীর সংরক্ষণ করা ৩০০ বস্তা আলু পাওয়া যায়। এসব আলু তাৎক্ষণিক মহাস্থান হাটের ৯ জন পাইকারি ব্যবসায়ীকে ডেকে সাড়ে ২৮ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়।

এরপর ৩৩ টাকা কেজি দরে সেই আলু পাইকারি বাজারে বিক্রির ঘোষণা দিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় মহাস্থান বাজারে মাইকিং করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসনের তদারকিতে মহাস্থান হাটে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এই আলু ৩৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। মাথাপিছু ৫ কেজি থেকে এক মণ পর্যন্ত আলু কিনে নেন ক্রেতারা।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র আরও জানায়, পাইকারী ব্যবসায়ীরা ৩৩ টাকা কেজি দরে খুচরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের কাছে এই আলু বিক্রি করেছেন। এখন খুচরা ব্যবসায়ীরা এই আলু সরকার–নির্ধারিত ৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবেন।

আজ মহাস্থান হাটে ৩৩ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি কার্যক্রম তদারক করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিমুজ্জামান। সেখানে উপস্থিত রায়নগর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বেলাল মন্ডল বলেন, হাটে খুচরা পর্যায়ে এখনো ৪৫ টাকা কেজি দরে সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সেই আলু ৩৩ টাকা কেজি দরে কিনতে পেরে খুশি ভোক্তারা। প্রশাসনের এ ধরনের উদ্যোগ সাধারণ মানুষের প্রশংসা পেয়েছে।

মহাস্থান গ্রামের বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন বলেন, মাইকিং শুনে তিনি আজ সকালে হাটে এসে ৩৩ টাকা কেজি দরে ১০ কেজি আলু কিনেছেন। খুচরা বাজারে এই আলু এখনো ৪৫ টাকা কেজি। প্রশাসনের আলু বিক্রির এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

মহাস্থান হাটের আড়তদার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই আলু যাতে খুচরা পর্যায়ে কোনোভাবেই ৩৬ টাকা কেজি দরের বেশি দামে বিক্রি করা না হয়, সেই বিষয়টি প্রশাসনকে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা দরকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বগুড়া ও জয়পুরহাটে গত মৌসুমে ৯৪ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়। আলু উৎপাদিত হয়েছে ২১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৮০ মেট্রিক টন। এবার দুই জেলার ৫৬টি হিমাগারে ৫ লাখ ৫ হাজার ২৬৮ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করেছেন মজুতদারেরা।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল উপজেলার দুটি হিমাগারে অভিযান চালিয়ে তিন মজুতদারের কাছে ৬৭৫ বস্তা আলু পাওয়া যায়। এই আলু হিমাগার থেকে সাড়ে ২৮ টাকা কেজি দরে মহাস্থান হাটের ৯ জন পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এরপর এলাকায় মাইকিং করে পাইকারি ৩৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে আজ সকালে মহাস্থান হাটে ২৭০ বস্তা (১৬ হাজার ২০০ কেজি) আলু ৩৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে। কাল অবশিষ্ট আলু বিক্রি করা হবে। মজুতদারদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে সব হিমাগারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.