বিশ্বনবীর আশেকদের ঢল জুলুসে

বিশ্বনবীর আশেকদের ঢল নেমেছিল চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুসে। ৫১তম এ জুলুসে অংশ নিতে দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফের হুজুর কেবলা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মজিআ) চট্টগ্রাম এসেছিলেন মঙ্গলবার।

জুলুসের পুরো পথজুড়ে ছিলেন সাজ্জাদানশিন পীর আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মজিআ) ও শাহজাদা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ কাসেম শাহ (মজিআ)। তাকবির, দরুদ, হামদ, নাতে রাসুল, গজল, জিকিরে মুখর ছিল চট্টগ্রাম।হাজার হাজার মানুষ সড়কের দুপাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন হুজুর কেবলাদের একনজর দেখার জন্য। কেউ কেউ ফুলের পাপড়ি, গোলাপজল ছিটিয়ে স্বাগত জানায় জুলুসকে।

বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে আটটায় জুলুস শুরুর আগে ষোলশহর আলমগীর খানকাহ-এ কাদেরিয়া সৈয়দিয়া তৈয়বিয়ায় সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মজিআ)।

তিনি চট্টগ্রামের জুলুস একদিন গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি, কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন তিনি।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর (স.) জশনে জুলুসে অংশ নিতে ভোর থেকে চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলার ভক্তরা আসতে থাকেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা মাঠে। দেখতে দেখতে কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকা লোকারণ্য হয়ে যায়। জামেয়ার বিভিন্ন ব্যাচের ছাত্র, গাউসিয়া কমিটির বিভিন্ন শাখার কর্মীরা ঈদের খুশিতে মেতে ওঠেন। একই ডিজাইনের পাঞ্জাবি, টুপি, পাগড়ি পরে নজর কাড়েন সবার। মোড়ে মোড়ে শরবত, পানি, চকলেট, খেজুর, রুটি, আমলকীসহ নানা ধরনের খাবার ও পানীয় দেন হুজুর কেবলার ভক্তরা।

জুলুস বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জাপুল, কাতালগঞ্জ, চকবাজার অলিখাঁ মসজিদ, প্যারেড মাঠের পশ্চিম পাশ হয়ে চট্টগ্রাম কলেজ, গণি বেকারি, খাস্তগীর স্কুল, আসকার দীঘি, কাজীর দেউড়ি, আলমাস, ওয়াসা, জিইসি, দুই নম্বর গেট ঘুরে জামেয়া মাদ্রাসা মাঠে মাহফিলে আসে জোহর নামাজের আগেই। কাজীর দেউড়ি মোড়ে সংক্ষিপ্ত মোনাজাত করেন হুজুর কেবলা। জোহর নামাজের পর জামেয়া মাদ্রাসার মাঠে দোয়া ও মোনাজাত হয়। এ সময় আমিন আমিন ধ্বনিতে ভাবগাম্ভীর পরিবেশ তৈরি হয়।

জুলুস মাঠে বক্তব্য দেন পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান, আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মহসিন, সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি মো. শামসুদ্দিন, জামেয়ার অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল আলিম রেজভি, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ।
 
১৯৭৪ সালের ১২ রবিউল আউয়াল বাংলাদেশে প্রথম জুলুসের সূচনা হয় গাউসে জামান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (র.) এর দিকনির্দেশনায়। চট্টগ্রামের বলুয়ার দীঘির পাড় খানকাহ শরিফ থেকে আনজুমানের তৎকালীন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নূর মোহাম্মদ আলকাদেরির নেতৃত্বে জুলুসটি বের হয়েছিল।  

আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (র.) চট্টগ্রামে জুলুসের নেতৃত্ব দেন ১৯৭৬ সালে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি জুলুসে নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি আর বাংলাদেশে আসেননি। তখন থেকে জুলুসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হুজুর কেবলা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মজিআ)।  

সরেজমিন দেখা গেছে, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা, আলমগীর খানকাহ, বিবিরহাট, চকবাজার, মুরাদপুর, জামালখান, কাজীর দেউড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিশুদ্ধ পানির স্টল দেওয়া হয়েছে। জুলুসের মাঠ ঘিরে রেললাইন ও আশপাশের এলাকায় বসেছে টুপি, আতর, ইসলামিক বই, পাঞ্জাবি, পাজামা, তসবিহ, জুতো, স্যান্ডেল, মোবাইল যন্ত্রাংশ, মুড়ি-মুড়কি, মুখরোচক খাবার, ফলের দোকান।  

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.