আন্তর্জাতিক একটি মহল অনির্বাচিত সরকারকে আনতে চায়: সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ও জাতীয় একটি মহল বাংলাদেশে অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসবে। অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে তাঁদের তাঁরা ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করবে।

আজ রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বৈঠকে থাকা একাধিক এমপি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

একই সঙ্গে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সেদিকটা খেয়াল রেখে দলীয় এমপিদের প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন। 

আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের পরে বৈঠক শুরু হয়। সেখানে সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে তিনি এমপিদের বক্তব্য শোনেন। জানা গেছে, বক্তব্য দেওয়া এমপিদের মধ্যে রয়েছেন—নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান, রাজবাড়ীর কাজী কেরামত আলী, লক্ষ্মীপুরের নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, চট্টগ্রামের আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আরমা দত্ত ও সৈয়দা রুবিনা আক্তার মিরা প্রমুখ। তাঁদের মধ্যে সবাই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে জোর দেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি তাঁর বক্তব্যকালে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা জানে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে। তাঁরা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। নির্বাচন বানচাল করে একটি অনির্বাচিত সরকার বসাতে চায়। এটা করতে পারলে তাঁদের তাঁরা ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।’ 

বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। আমরাও যাতে নির্বাচনে অংশ না নিই, সেই ষড়যন্ত্র চলছে। এটা হলে তাঁরা তাঁদের ইচ্ছেমতো ব্যক্তিদের ক্ষমতায় বসাতে পারে। তবে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারে, সে কারণে নির্বাচন বাদ দিয়ে অনির্বাচিত সরকারকে চায় দেশি-বিদেশি অনেকেই। কারণ অনির্বাচিত সরকার হলে তাঁদের প্রভাব বিস্তার করতে সুবিধা হয়।’ 

জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপির চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করলে কোনো বাধা দেওয়া হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা আন্দোলন করতে চায় করবে। কোনো সমস্যা নেই। আমরা বাঁধা দেব না। তবে অগ্নি-সন্ত্রাস, ভাঙচুর করলে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা সব মোকাবিলা করে অভ্যস্ত। হেফাজত মোকাবিলা করেছি। জামায়াত-বিএনপি মোকাবিলা করেছি। এবারও করব।’ 

সূত্র জানায়, নির্বাচনে জরিপের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়ার কথা আবারও এমপিদের জানান প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে বর্তমান এমপিদের সবাই মনোনয়ন পাবেন না সেটাও জানান। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃতি দিয়ে একজন সংসদ সদস্য বলেন, ‘তিনি বলেছেন, বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী মনোনয়ন দেওয়া হবে। যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তাঁর জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।’ 

কাউকে জয়ী করার দায়িত্ব নিতে পারবেন না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোট অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। এই ভোটে সবাইকে জিতে আসতে হবে। কাউকে জিতে আনার দায়িত্ব আমি নিতে পারব না। আমি কারও চেহারা দেখে মনোনয়ন দেব না। দেখে শুনে যে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেব।’ 

এ সময় তিনি বলেন, এখানে যারা আছেন সবাই মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। যাকে নমিনেশন দেব তার জন্য কাজ করতে হবে। নমিনেশন পান না পান নৌকার বিরোধিতা করা যাবে না। যারা নৌকার বিরোধিতা করবে তাদের রাজনীতি চিরতরে শেষ বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। 

মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, মনোনয়ন দেওয়া হবে বিভিন্ন জরিপ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। যার গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ কাজ করতে হবে।’ 

জানা গেছে, শামীম ওসমান তাঁর বক্তব্যে অন্তঃকোন্দল ভুলে গিয়ে আগামী নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করে শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। 

বৈঠকে কাজী কেরামত আলী জেলা আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করেন। তার ভাইকে সাধারণ সম্পাদক করার পর থেকে তিনি নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়েছেন এলাকায় গিয়ে এমপিদের মিটিং করার জন্য। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের কথা হচ্ছে তাদের অনুমতি ছাড়া কোনো মিটিং করা যাবে না। এমপি হয়েও কি তিনি এলাকায় যেতে পারবেন না? এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী চুপ ছিলেন বলে জানা গেছে। 

বৈঠকে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, ‘আমাদের ত্যাগী নেতা-কর্মী রয়েছে, তারপরও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের আসন ছেড়ে দেওয়া হয়। আমরা চাই, আমাদের চারটা সিটই (লক্ষ্মীপুর জেলার ৪ সংসদীয় আসন) আওয়ামী লীগের যেন হয়। আমরা সবাই এক জোট। আশা করি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জিতে আসতে পারব।’

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.