টানেল যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুল কাঙ্ক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (২৮ অক্টোবর) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন তিনি।

এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। টানেল উদ্বোধনের পর আতশবাজি পুড়িয়ে আনন্দ উদ্‌যাপন করা হয়।এ সময় উপস্থিত অতিথিরা করতালি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

সকালে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে যান। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী গাড়িবহর টানেল এলাকায় প্রবেশ করে। টানেল দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারা টোল প্লাজায় যান। সেখানে টোল প্লাজা কমপ্লেক্স ও টানেলের স্মার্ট মনিটরিং কক্ষ পরিদর্শন করেন। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী পৌনে ১২টায় পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে টোল প্লাজায় টোল দিয়ে টানেল হয়ে আনোয়ারা প্রান্তে যাত্রা করেন। এরপর সেখানে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে টোল নেন ঝুমুর আক্তার।  প্রধানমন্ত্রী তার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। প্রথম যাত্রী হিসেবে টানেলে প্রবেশ করেন শেখ হাসিনা। এরপর তাঁর গাড়িবহরে থাকা অন্য গাড়িগুলো টোল পরিশোধ করে। ঝুমুর আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, টানেলে প্রথম যাত্রী প্রধানমন্ত্রী টোল দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে টোল নিতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।  

রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য টানেলটি খুলে দেওয়া হবে। টানেলের নিরাপত্তায় লাগানো হয়েছে অত্যাধুনিক ১১০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। আনোয়ারা প্রান্তে স্থাপন করা হয়েছে মনিটরিং সেন্টার। যেখান থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পুরো টানেলে নজরদারি চালানো হবে। টানেলের প্রতিটি টিউবে রয়েছে লম্বা একটি হিট সেন্সর। যেখানে অগ্নিকাণ্ড বা কোনো কারণে তাপ লাগা মাত্র অটোমেটিক সিসিটিভি ক্যামেরা ঘটনাস্থলের দিকে ঘুরে যাবে। এছাড়া কোনো দুর্ঘটনা হলে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি চালানো হবে।

নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) আগামী পাঁচ বছর টানেলের যাবতীয় বিষয় দেখভাল করবে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা তাদের কুইক রেসপন্স টিম থাকবে। টানেলের ভেতরে যেকোনো সমস্যায় দ্রুত কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় সেই টিম ছুটে যাবে। তাদের সঙ্গে নৌবাহিনী, পুলিশ নিরাপত্তার কাজ করবে। এছাড়া ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে যানবাহন চলাচল নিয়ে। অগ্নি দুর্ঘটনায় ঠেকাতে টানেলের দুই প্রান্তে স্থাপন করা হচ্ছে প্রথম শ্রেণির দুটি ফায়ার স্টেশন।

কি-পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই) স্থাপনা বিবেচনায় নিরাপত্তায় থাকবে টানেল। প্রবেশমুখে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হচ্ছে চারটি অত্যাধুনিক স্ক্যানার। বর্তমানে দুই প্রান্তে দুটি স্ক্যানার বসানোর হয়েছে। স্ক্যানার দিয়ে টানেলের ভেতর দিয়ে যাওয়া পণ্যবাহী ভারী গাড়িগুলোতে চালক ও পণ্য রাখার অংশ আলাদা রঙের রশ্মি দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। এছাড়া টানেলের ভেতর দিয়ে চলাচলকারী বাস, কার, মাইক্রোবাস অন্যান্য যানবাহনের ক্ষেত্রে স্ক্যানারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে ইউভিএসএস (আন্ডারভেহিকেল স্ক্যানিং সিস্টেম)। ইউভিএসএস দিয়ে যানবাহনের নিচের অংশে বিস্ফোরকজাতীয় সরঞ্জাম আছে কি না, তা যাচাই করা হবে।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্রিটেন থেকে আনা স্ক্যানারগুলো টানেলের ভেতর দিয়ে যাওয়া পণ্যবাহী ভারী গাড়িগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। ১৩ টন ওজনের প্রতিটি স্ক্যানার প্রায় ৫০ মিটার লম্বা ও প্রশস্ত ১০ মিটার।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.