অসন্তোষ শ্রমিক: সাভারে ৩৫ শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে আ. লীগের জরুরি বৈঠক

ঢাকা ও এর আশপাশে শ্রমিক অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে সাভার ও আশুলিয়ার প্রায় ৩৫টি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের আহ্বানে এ সভায় প্রায় ৮০ জন শ্রমিক নেতা অংশ নেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। 

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে সাভারের আশুলিয়া পল্লিবিদ্যুৎ এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে এ জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে চলমান শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন ও ‘শ্রমিক বেশে বহিরাগত দুর্বৃত্তদের দমন’ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত হয়। 

ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকা ও এর আশপাশের পোশাক শ্রমিকেরা সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আন্দোলন বিক্ষোভ করছেন। গত সোমবার থেকে সেই বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। অন্তত একটি কারাখানায় আগুন দেওয়া হয়েছে। সহিংসতায় কমপক্ষে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে বুধবার জরুরি বৈঠক ডেকেছে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

মঙ্গলবার রাতে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন সাভারের স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক নেতারা। জাতীয় শ্রমিক ঐক্য লীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার ইসলাম বলেন, ‘আমরা সংকট নিরসনের পথ খোঁজার জন্য আজকে একত্রিত হয়েছি। শ্রমিকদের কাছে একটি ভুল মেসেজ গেছে। আমাদের মজুরি বোর্ডের কার্যক্রম চলমান। আইন অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এর সময় আছে। মালিকেরা একটা প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটিই তো শেষ কথা নয়। একটা স্বার্থান্বেষী মহল জামায়াত–বিএনপির আন্দোলনে নিজেদের কাজে লাগানোর জন্য শ্রমিক সেক্টরে এই প্রস্তাবকে চূড়ান্ত বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ 

এ সময় পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি তুহিন চৌধুরী বলেন, ‘যেখানে ওষুধের দরকার সেখানে না দিয়ে আমরা অন্যত্র ব্যবহার করছি। মজুরি বোর্ডের কাছে আমাদের সর্বোচ্চ দাবি। ওখানে আমরা অবস্থান নিব কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। সেখানে আমাদের শ্রমিকের জন্য ফাইট হবে। তার বদলে আমরা এখানে মারামারি, হানাহানি করলে তো শ্রমিকদেরই ক্ষতি হবে। আমরা তো তখন তাদের জন্য কিছু করতে পারব না।’ 

বুধবার থেকে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ৩৫টি শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে একটি মিটিং করেছি। বিএনপি গত ২৮ অক্টোবর তাদের সর্বশেষ আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা ফেক আইডি দিয়ে শ্রমিকদের ভুয়া মেসেজ দিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। এটা যেন আর না হতে পারে সে জন্য আমরা শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বসেছি। শ্রমিক নেতাদের আহ্বান করেছি যেন আসল মেসেজটা তারা নিজেদের আইডি থেকে শ্রমিকদের জানিয়ে দেয়।’ 

আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘এখনো শ্রমিক মজুরি বোর্ড কর্তৃক চূড়ান্ত বেতন ঘোষিত হয়নি। ঘোষণার আগে এ ধরনের আন্দোলন হওয়ার কথা নয়। বিএনপি–জামায়াত পরিকল্পিতভাবে এটি করেছে, এটি সবাই এবং শ্রমিক নেতারাও উপলব্ধি করেছে। ওনারা আমাদের কথা দিয়েছেন, আগামীকাল (বুধবার) থেকে তাঁরাও মাঠে থাকবেন, আমরাও থাকব, যাতে শ্রমিক অসন্তোষ না করতে পারে। যারা বিভিন্ন কারখানায় হামলা চালাচ্ছে তারা আসলে শ্রমিক নয়। সাধারণ শ্রমিকদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, তারা যেন বিএনপি জামায়াতের পাতানো ফাঁদে পা না দেয়।’ 

আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ধামসোনা ইউপি চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের আয়োজনে এ বৈঠকে অংশ নেন ইয়ারপুর ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ সুমন ভুইয়া, পাথালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান, আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) মিজানুর রহমান, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আল কামরান, ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স সাভার আশুলিয়া ধামরাই আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মো. ইমন শিকদার, বিসিডব্লিউএস এর সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহীম প্রমুখ। 

এদিকে শিল্প পুলিশ–১–এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেছেন, ‘আমরা এরই মধ্যে কিছু মহলকে শনাক্ত করতে পেরেছি। ঢাকা থেকে শ্রমিকদের উসকানি দিচ্ছে, সেই জিনিসগুলো আমরা এখানে সম্মুখীন হচ্ছি। উচ্ছৃঙ্খল যে শ্রমিকগুলো আছে তাদের আমরা ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছি, তারা যেন কোনো ধরনের সহিংসতামূলক কার্যক্রমে লিপ্ত হতে না পারে। সে অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.