আপস-সমঝোতার সমীকরণে প্রায় প্রতিপক্ষহীন ভোটের মাঠ, রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরির শঙ্কা
নির্বাচনের মাঠে নেই আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। আর জাতীয় পার্টি, বিএনএম, তৃণমূলসহ যারা আছে, তারাও একরকম নির্বাচনী সখ্যতা রেখেছে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে। এছাড়া ডামি কিংবা স্বতন্ত্রদের অনেকেই আছেন দলীয় নিয়ন্ত্রণে। বিশ্লেষকের মতে, দলগুলোর জন্য আপসকামী ভোটের কৌশল ডেকে আনবে রাজনৈতিক শূন্যতা।
বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে রাজনীতির মাঠে নানা বক্তব্য থাকলেও, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে বড় শক্তি হিসেবে এখনো দাঁড়াতে পারেনি অন্য কোনো দল। কিন্তু রাজনীতির মারপ্যাঁচে টিকতে না পারায়, এবার নৌকার বিরুদ্ধে ধানের শীষের লড়াই দূরে থাক, নির্বাচন থেকেও যোজন-যোজন দূরে বিএনপি। তাই ভোটের মাঠ কার্যত ফাঁকা ক্ষমতাসীনদের জন্য।
বর্তমানে এই ফাঁকা মাঠের ফ্যাক্টর জাতীয় পার্টি। এককভাবে নির্বাচনের ‘অ্যাক্টিং’ দেখালেও আসন শেয়ারিং করতে ভেতরে ভেতরে চলছে দেনদরবার। এদিকে তৃণমূলের তৈমুরের মুখ ফসকে বেরিয়েছিল সমঝোতার ইঙ্গিত। নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমি পাশে কিনব না। আমি যা বলার বলেছি। এ অবস্থায় আমি আমার কথা পরিবর্তন করবো না।’
এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও আছেন শৃঙ্খলে। দাঁড়াতে মানা ছিল ফ্রি স্টাইলে। তাইতো বিদ্রোহী প্রার্থীর জায়গায় এবার আবির্ভাব ঘটেছে ডামি প্রার্থীর। সুতরাং, বেশিরভাগ দল ও ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীরা যখন নিজেদের মধ্যে মিলেমিশে ভোট করছে, তখন প্রশ্ন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আসলে কে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ডামি প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়টা স্পষ্ট হবে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফ্রি স্টাইল হবে না। তিনি বলেন, বিএনপি বাদে নির্বাচনে আরও দল আছে। তৃণমূল বিরাট জোট। এছাড়া সুপ্রিম পার্টিসহ আরও অনেক পার্টি আছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, সাংবিধানিক শূন্যতা থেকে বাঁচতে গিয়ে দলগুলো যে আপসকামী ভোটের কৌশল নিয়েছে, তা ডেকে আনতে পারে রাজনৈতিক শূন্যতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, যদি প্রতিযোগিতা না থাকে তাহলে সেটাকে নির্বাচন বলা যাবে না। গণতান্ত্রিক নির্বাচন কিনা সেই প্রশ্ন থেকে যায়। আপসকামিতা ক্ষমতার জন্য করলেও সেখানে আদর্শে বিচার করছেন না। ক্ষমতার পরিবর্তন হবে কিন্তু রাজনৈতিক যে মূল্যবোধ সেগুলো হারিয়ে গেল।
তিনি বলেন, ভোট ও ক্ষমতার প্রশ্নে ছোট দলগুলো নিজেদের মেরুদণ্ড বাঁকা রাখাতেই স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে নিচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে তা পঙ্গুত্বে নিয়ে যেতে পারে পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে।