টাইব্রেকারে জাপানের স্বপ্নভঙ্গ করে কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া

জয়ের পর ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়দের উদ্‌যাপন

ফুটবলে নিজেদের ইতিহাস নতুন করে লেখার সুযোগ ছিল জাপানের। সে লক্ষ্যে এবার বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো আগে গোল করে এগিয়েও গিয়েছিল এশিয়ার দেশটি। কিন্তু নকআউট ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার অভিজ্ঞতার সামনে টিকতে পারেনি জাপান।

আল জানুব স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর লড়াইয়ে জাপানের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র করেছিল ক্রোয়েশিয়া। অতিরিক্ত সময়েও গোল পায়নি কোনো দল। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। স্নায়ু ক্ষয়ের এই লড়াইয়ে জাপানকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া।

এই হারে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন হাতছাড়া হলো জাপানের। ২০০২ ও ২০১০ ও ২০১৮ বিশ্বকাপের মতো এবারও শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিল এশিয়ার দলটি।

দুই দলই ধীরে সুস্থে খেলা শুরু করেছিল। এর মধ্যেই ৪৩ মিনিটে বক্সের জটলার মধ্য থেকে গোল করে জাপানকে এগিয়ে দেন দায়েন মায়েদা। ক্রোয়েশিয়া এই গোল শোধ করেছে বিরতির পর ৫৫ মিনিটে ইভান পেরিচিসের গোলে।

এরপর কোনো গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে—এবার বিশ্বকাপে শেষ ষোলোয় যা প্রথম। বিশ্বকাপ ও ইউরো মিলিয়ে নকআউটপর্বে এবারসহ মোট ৮ ম্যাচের মধ্যে ৭টি-ই অতিরিক্ত সময়ে নিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। আজ ১০৫ মিনিটের মাথায় কাউরু মিতোমার শট ক্রোয়াট গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচ অবিশ্বাস্যভাবে রুখে না দিলে ফলটা অন্যরকমও হতে পারত।

অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধেও সেভাবে আক্রমণ করেনি কোনো দল। কোভাচিচ-বুদিমিররা এ সময় দুটো সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি। বোঝাই যাচ্ছিল, সাবধানে খেলে ম্যাচটা টাইব্রেকারে নেওয়াই লক্ষ্য। টাইব্রেকারে প্রথম শটেই জাপানের তাকুমি মিনামিনোকে রুখে দেন ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার লিভাকোভিচ। পরের শটে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে লক্ষ্যভেদ করেন নিকোলা ভ্লাসিচ।

জাপানের দ্বিতীয় শটে কাউরো মিতোমাকেও রুখে দিয়ে ক্রোয়াটদের জয়কে আরও কাছে নিয়ে যান লিভাকোভিচ। ব্রোজোভিচ ক্রোয়াটদের হয়ে দ্বিতীয় শটেও লক্ষ্যভেদ করেন। এরপর আসানো লক্ষ্যভেদ করলেও জাপানের মায়া ইশোদাকেও ঠেকিয়ে ক্রোয়েশিয়ার জয়কে সময়ের ব্যাপারে পরিণত করেন লিভাকোভিচ। মারিও পাসালিচ এরপর লক্ষ্যভেদ করে ক্রোয়েশিয়ার ৩-১ ব্যবধানের জয় নিশ্চিত করেন।

জয়ের পর ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়দের উদ্‌যাপন

এর আগে নির্ধারিত সময়ের দুই অর্ধেই দাবার কৌশলের মতো খেলেছে দুই দল। অতিরিক্ত দৌড়ে কেউ বল হারাতে চায়নি। আক্রমণে উঠেছে ধীরে-সুস্থে। ক্রোয়েশিয়া প্রথমার্ধে আক্রমণ করেছে বাঁ প্রান্তের উইঙ্গার ইভান পেরিসিচে ভরসা রেখে।

৩ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে রিতসু দোয়ানের ক্রসে শোগো তানগুইচি ঠিকমতো মাথা ছোঁয়াতে পারলে গোলটা তখনই পেয়ে যেত জাপান। এরপর দুটি গোলের সুযোগ নষ্ট করেন ক্রোয়াট তারকা পেরিসিচ। শেষ পর্যন্ত ৪০ মিনিটে লুকা মদরিচের ফ্রিকিক থেকে বক্সে বল পেয়ে প্রতি আক্রমণে উঠে গোল পায় মরিয়াসুর দল।

কর্নার থেকে খেলা তৈরি করে বক্সে ক্রস করেন রিতসু দোয়ান। জটলার মধ্যে বল পেয়ে ঠান্ডা মাথায় বল ক্রোয়েশিয়ার জালে পাঠান জাপানের উইঙ্গার দায়েন মায়েদা। গ্রুপপর্বে মাত্র ৩২ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে শেষ ষোলোয় উঠে আসা জাপান আজ প্রথমার্ধে মাত্র ৪১ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোল আদায় করে নেয়। তবে বোঝাই যাচ্ছিল, বিরতির পর মরণকামড় দেবে ক্রোয়েশিয়া।

দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরুর ঠিক ১০ মিনিটের মাথায় সেটাই করে দেখান পেরিসিচ। চাপ বিস্তার করে খেলার ফল হিসেবেই সমতাসূচক গোলটি পায় ক্রোয়েশিয়া।ম্যাচে ক্রোয়াটদের উচ্চতার সামনে বাতাসে ভেসে আসা বলের দখল নিতে বারবার মার খেয়েছে জাপান। গোলটাও এমন এক বল থেকে এসেছে। দেয়ান লভরেনের ক্রসে বক্সে লাফিয়ে হেডে গোল করেন পেরিসিচ। জাপানের কোনো ডিফেন্ডারের গোলটি ঠেকানোর সাধ্য ছিল না।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.