স্থিতিশীলতার জন্য নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করবে চীন: রাষ্ট্রদূত

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বাইরে শান্তি, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার বিষয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকারের সঙ্গে চীন জোরালোভাবে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। আজ বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশে চীনের ভাবমূর্তি’ বিষয়ে পরিচালিত একটি সমীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে চীনা রাষ্ট্রদূত এমনটি জানান।
নির্বাচনের পর বাংলাদেশে তিস্তা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়েও চীন কাজ শুরু করতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর অলটারনেটিভস’ স্থানীয় একটি হোটেলে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।

৩২ জেলায় বিভিন্ন বয়সের পাঁচ হাজার নারী-পুরুষের মধ্যে এ বছর সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ৮১ ভাগ উত্তরদাতার বয়স ছিল ১৫ থেকে ৩৪ বছর। আর উত্তরদাতাদের ৬৮ ভাগ ছিলেন পুরুষ। ৩২ ভাগ নারী। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৬৪ ভাগের বেশি মানুষ কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রিধারী। আর ২১ ভাগ উচ্চমাধ্যমিক পাস। এর আগে একই ধরনের প্রথম সমীক্ষাটি পরিচালিত হয় ২০২২ সালে।

এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধিকাংশ মানুষ মনে করেন তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান ও বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বাজার বাড়াতে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আর ৮৬ ভাগ মানুষ মনে করেন চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দিকটি সবচেয়ে গুরুত্ববহ। দুই দেশের সম্পর্কে সামরিক খাতেরও গুরুত্ব আছে বলে মনে করেন প্রায় ৪৯ ভাগ লোক। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও চীনের গুরুত্ব আছে—এমনটি মনে করেন মাত্র ৩১ ভাগ উত্তরদাতা।

সমীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রায় ৬৬ ভাগ লোক মনে করেন, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীন সবচেয়ে বড় অংশীদার হওয়া বাংলাদেশের জন্য ভালো। আর চীনের ঋণের ফাঁদে বাংলাদেশের পড়ার ঝুঁকি আছে বলে মনে করেন প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ।

বাংলাদেশে আশ্রিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে চীনের ভূমিকায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন প্রায় ৮১ ভাগ মানুষ। আর ৪৪ ভাগ মানুষ মনে করেন, চীনের এ ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ভূমিকায় জোর দিয়েছেন যথাক্রমে ১৯ ও ১০ ভাগ মানুষ।

চীনের উইঘুর মুসলমানেরা রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে দেশটিতে নিপীড়নের শিকার হয় বলে মনে করেন কমপক্ষে ৬৬ ভাগ মানুষ। চীনাদের কাজপাগল বলে মনে করেন সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৬৬ ভাগ লোক। আর মাত্র ৩৭ ভাগ মানুষ চীনাদের বন্ধুভাবাপন্ন মনে করেন।

সমীক্ষাটির ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে ভারতে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার আহমেদ তারিক করিম বলেন, বাংলাদেশের উচিত নিজস্ব সামর্থ্য বাড়ানো, যাতে বিভিন্ন সমস্যা ভালোভাবে সামাল দেওয়া যায়। তাহলে অন্য দেশের সঙ্গে নির্ভরতার সম্পর্কে রাশ টানা যায়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইশফাক এলাহী চৌধুরী বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে চীন বড় জলবিদ্যুৎ কাঠামো গড়ে তুলছে বলে খবর হচ্ছে। দেশটির উচিত এ বিষয়ে বাংলাদেশকে খোলামেলা জানানো। চীনা অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পে দুর্নীতি জাপানের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের তুলনায় বেশি বলে মানুষের ধারণা। এ বিষয়টিও চীন সরকারের দেখা উচিত।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো করার ক্ষেত্রে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.