দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না: মুজিবুল হক

সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক । ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দল দুটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। আজ শুক্রবার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

ভৌগোলিকভাবে একটি দেশ পেলেও বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি দাবি করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ‘যে আদর্শে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তার লেশমাত্র নেই৷ আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে গত ৩২ বছরে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি সরকার দেশকে সুশাসন দিতে পারেনি৷ দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাই দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকেও চায় না, বিএনপিকেও চায় না।’

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকালে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় মুজিবুল হকের সঙ্গে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মুজিবুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকার দেশে দুর্নীতি দূর করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। দেশে বেকার সমস্যা দূরীকরণে তাদের কোনো উদ্যোগ নেই৷ দেশের টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, ব্যাংক লুট হচ্ছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে এমনকি আমাদের দলেও বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধাপরাধীরা স্থান পেয়েছে৷ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটা আমার জন্য লজ্জার, দুঃখজনক। স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে কোনোভাবে আপস হতে পারে না।’

বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলটির নেতা–কর্মীরা। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রুহিন হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় জনগণ ভোটবিমুখ হয়ে পড়ায় মৌলিক অধিকার আদায়ের সংগ্রাম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ৫১ বছর আগে যে শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধারা রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই লক্ষ্য ও আদর্শ থেকে দেশ অনেক আগে বিচ্যুত হয়েছে৷ গণতন্ত্র কখনো এ দেশে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিতে পারেনি। শ্রেণিবৈষম্যের সঙ্গে এ দেশে রন্ধ্রে রন্ধ্রে সাম্প্রদায়িকতা ঢুকে পড়েছে।

বেলা সোয়া ১১টায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ঈসমাইল হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের কথা সরকার মুখে মুখে যত বলুক না কেন, পুরো ব্যাপারটি থেকে গেছে কাগজে–কলমে। যে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রণয়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা, তা অর্থবহভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।

শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের পর বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আইয়ুব সরকার বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল, সেই ভোটাধিকারী কি এখন বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে? এই কর্তৃত্ববাদী সরকার মানুষের ভোটাধিকার তথা গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী কাজ করছে না?

বেলা সাড়ে ১১টায় শ্রদ্ধা জানান গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। এসময় তিনি বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্পষ্ট ঘোষণা ছিল রাষ্ট্র বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য সাম্য মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করবে। আজকে ৫১ বছর পর এসে আমরা দেখছি রাষ্ট্রের বাহিনীগুলো মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। রাতের বেলা তারা ভোটের ব্যালটবক্স জাল ভোটে ভর্তি করছে। মুক্তিযুদ্ধের যে ঘোষণা, তার উল্টো পথে চলছে বাংলাদেশ।’

এ ছাড়া স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) বিকল্পধারা বাংলাদেশ, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.