দেশে ফিরে যা বললেন নাবিকরা

এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছেন। তাদের স্বাগত জানাতে বন্দরে ছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের সিটি মেয়র, কেএসআরএমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং নাবিকদের স্বজনরা।

বন্দরে পৌঁছে জাহাজের ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সোমালিয়ার দস্যুদের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে আজ আমরা এখানে পৌঁছাতে পেরেছি। আমরা ২৩ নাবিকই পৌঁছাতে পেরেছি। আমাদের সরকার কৌশলগতভাবে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।’

‘আমি বলেছিলাম বিদেশি নৌ-বাহিনী যেন ভায়োলেন্স না করে, যাতে আমাদের নাবিকদের কারও প্রাণ না যায় বা জাহাজের কোনো ক্ষতি যেন না হয়। আমি আমাদের নৌবাহিনী প্রধানকে ধন্যবাদ জানাই,’ বলেন তিনি।

ক্যাপ্টেন রশিদ বলেন, ‘আমরা সবাই সুস্থ ও অক্ষতভাবে ফিরতে পেরেছি, পরিবারের কাছে ফিরতে পেরেছি। এ এমন অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’ 

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ক্যাপ্টেন বলেন, ‘প্রথমদিন যখন আমরা দস্যু দ্বারা আক্রান্ত হলাম, তখন সেকেন্ড অফিসার ব্রিজে ছিলেন। আমি নিচে নেমে অ্যালার্ট দিচ্ছিলাম। সবকিছু অতি দ্রুত ঘটছে। দস্যুরা স্পিডবোটে এসে জাহাজে উঠে ব্রিজে চলে আসে।’

‘আমি আর সেকেন্ড অফিসার আমাদের হিডেন রুমে যেতে পারিনি। সেকেন্ড অফিসার আটক হওয়ার পর আমি গিয়ে দেখি একে-৪৭ তাক করে আছে তার দিকে। আমি যেতেই আমার দিকেও একে-৪৭ তাক করে। আমি হাত তুলে সারেন্ডার করে বললাম, আমরা বাংলাদেশি, আমরা মুসলিম। আমরা রোজা আছি,’ বলেন তিনি।

ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ আরও বলেন, ‘তারা সবাইকে ডাকতে বলে। আমি স্ট্রং ছিলাম। আমরা দুর্বল হয়ে পড়িনি। সবাই চলে আসে সেখানে। এরপর আমরা সবাই সেখানেই ব্রিজের মধ্যে সারাদিন সারারাত ছিলাম।’

‘মৃত্যুর হুমকি ছিল’ উল্লেখ করে ক্যাপ্টেন বলেন, ‘আমাদের নাবিকদের কেউ কেউ কান্নাকাটি করছিল। আমিও জীবনে প্রথম এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম। মনে ভয় ছিল, কিন্তু বডি ল্যাঙ্গুয়েজ স্বাভাবিক রেখেছি। সবাইকে হ্যান্ডেল করে, যেন আমাদের কোনো ক্রুর কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর রাখি। সেফটি অফ লাইফটাকে প্রাধান্য দিয়েছি।’          

আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে নাবিকরা এমভি আব্দুল্লাহর মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের লাইটার জাহাজ জাহান মণি-৩ তে করে বন্দরে পৌঁছান।

২৩ নাবিককে বরণ করে নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এসময় নাবিকদের স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন। বন্দরে পৌঁছার পর সেখানে উপস্থিত সকলের প্রতি হাত নেড়ে অভিবাদন জানান নাবিকরা। অবশেষে নিজ দেশে ফিরতে পারায় তারা স্বস্তি প্রকাশ করেন।

একজন নাবিক জানালেন, বন্দি অবস্থায় শুরু থেকে আমাদের জীবন নিয়ে টানাটানি ছিল। আমরা সেখান থেকে বেঁচে ফিরব কিনা, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত ছিলাম। আমরা সবাই ব্রিজরুমে অবস্থান করছিলাম। আসলে একবার জিম্মি হয়ে গেলে ওদের সঙ্গে সহযোগিতা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। আমরা যাতে সহজভাবে থাকতে পারি, তাই ওদের সঙ্গে কো-অপারেট করছিলাম।

আরেকজন নাবিক বলেন, কী পরিমাণ এক্সাইটেড আমরা, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমরা যখন ওই সিচুয়েশনে পড়েছি, তখন ভাবতে পারিনি যে, দেশে ফিরতে পারব। এখন ফিরলাম। সকলের দোয়া ছিল আর আল্লাহর অশেষ রহমত ছিল।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.