ভুল-বোঝাবুঝি থেকে হয়তো রাষ্ট্রদূত নিরাপত্তাহীনতার কথা বলেছেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সম্প্রতি ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের ডাকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের উপস্থিতিতে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, সেটিকে নিরাপত্তাহীনতা বলতে নারাজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে জেলা পুলিশের উদ্যোগে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানতামও না যে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত একটি বাসায় যাবেন। উনি বলেছেন, সেই বাসায় যাওয়ার কথা জানাজানি হয়েছে। আমরা কিন্তু জানতাম না। আমি দিবাগত রাত দুইটার সময় শুনেছি আমাদের পুলিশের মাধ্যমে। কারণ, ঢাকায় মহানগর পুলিশের বিট পুলিশিং সিস্টেম চালু হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে পুলিশ এই কার্যক্রম করে থাকে। তারা যখন জানতে পেরেছে, তখনই আমি শুনলাম, তাঁরা এখানে আসবেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে চলে গিয়েছে। তাঁর আসা-যাওয়ায় যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে, এটায় তারা সচেষ্ট ছিল। আমাদের রাষ্ট্রদূতদের জন্য যথেষ্ট প্রোটেকশন দিয়ে থাকি। আমাদের পুলিশ বাহিনী বিশেষ বিশেষ কয়েকটি রাষ্ট্রদূতের বেলায় বেশি করে নজরদারিতে রাখে। তাঁর নিরাপত্তার ঘাটতি হয়েছে বলে তিনি (রাষ্ট্রদূত) যে বলছেন, এটা হয়তো তিনি ভুল-বোঝাবুঝির জন্য বলেছেন। কারণ, এখানে এমন কিছু হয়নি, যার জন্য তাঁর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি যতটুকু খবর পেয়েছি, জিয়াউর রহমানের আমলে যাঁরা হত্যা-গুমের শিকার হয়েছিলেন, তাঁদের সন্তানেরা দাবি জানানোর জন্য, তাঁদের ন্যায্য বিচারের জন্য তাঁর কাছে একটি স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন।’
পিটার হাস ১৪ ডিসেম্বর সকালে রাজধানীর শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলামের বাসায় যান। প্রায় এক দশক ধরে সাজেদুলের খোঁজ পাচ্ছে না তাঁর পরিবার। সাজেদুলের বোন গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়ক। রাষ্ট্রদূত যখন ওই বাসায় গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন ওই বাড়ির সামনে জড়ো হন ‘মায়ের কান্না’ নামের আরেকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমানবাহিনীর যেসব সদস্যের ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরি চলে গিয়েছিল, তাঁদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’।
ওই সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবস্থান দেখে নিরাপত্তাকর্মীদের পরামর্শে সাজেদুলের বাসার কর্মসূচি সংক্ষেপ করে বেরিয়ে আসেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। এ সময় ‘মায়ের কান্না’র লোকজন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করেন। তখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় সেখান থেকে বেরিয়ে যান। ওই ঘটনার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন তিনি। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপির আগামী নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংবিধান মেনে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নির্বাচন কমিশনের আওতায় নির্বাচন হবে। কে নির্বাচনে আসবে, কে আসবে না, সেটি তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি করলে কিংবা কাউকে জিম্মি করে কিছু ঘটানোর চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের যে দায়িত্ব, তারা সেটা পালন করবে।
দুপুরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের উদ্বোধন শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এক সুধী সমাবেশে অংশ নেন মন্ত্রী। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বিকেলে তিনি রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বরে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।