মাসের শেষ দিকে বয়ে যেতে পারে শৈত্যপ্রবাহ
ফাইল ছবি
ডিসেম্বর মাসের শেষভাগে এসেও দেশে সেভাবে শীত জেঁকে বসেনি এখনো। তাপমাত্রা রয়েছে অন্যান্য বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি। অবশ্য গতকাল শুক্রবার দেশের অন্তত তিনটি জায়গায় শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি তাপমাত্রা ছিল। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, চলতি ডিসেম্বরের শেষের দিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দেখা যেতে পারে।
কোনো এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা টানা তিন দিন ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে সেখানে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলা হয়। গতকাল উত্তরের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বেশির ভাগ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল। আজ শনিবার দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।
গতকাল ভোরে উত্তরের জেলা নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। রাজশাহী ও ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি ও ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি তাপমাত্রা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গত ৩০ বছরে ডিসেম্বরে মাসে দেশে সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সচরাচর এ সময় দেশের ভেতর দিয়ে এক থেকে দুটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। তবে এ বছর ডিসেম্বরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এলাকাভেদে এক থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। অর্থাৎ এবার স্বাভাবিকের তুলনায় শীত ছিল কম।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, ডিসেম্বরের শেষে শীত জেঁকে বসতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আজ দেশের কয়েকটি স্থানের তাপমাত্রা কমে শীত বাড়লেও রোববার থেকে আবারও তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। এ ধারা কয়েক দিন অব্যাহত থাকার পর আবারও তা কমতে পারে।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়নি। তবে কয়েকটি জেলায় শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে। চলতি মাসের শেষের দিকে কয়েক দিনের জন্য মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
নওগাঁয় শীতে ভোগান্তি
গতকাল ভোরে নওগাঁর বদলগাছীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবারের শীতে এখন পর্যন্ত এটাই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে ১৬ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বদলগাছি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় এক সপ্তাহ ধরেই তাপমাত্রা নিম্নমুখী হতে শুরু করে। গতকাল এক দিনে সেখানকার তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।
নওগাঁয় শীত জেঁকে বসায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরেছে। ঘন কুয়াশার দাপট ছিল গতকাল সকাল পর্যন্ত। এ সময় ঘন কুয়াশার কারণে নওগাঁ শহরের রাস্তাঘাটে যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
শহরের তাজের মোড় এলাকায় সকাল ১০টার দিকে কথা হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আবু বক্করের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে ঠান্ডা পড়ে গ্যাছে। আজকা সকালে গাড়ি চালাতে য্যায়ে ঠান্ডার চোটত হাত-পা জড়ে যাছে। সিএনজি চালানো কঠিন হয়ে গ্যাছে।’
ফ্লাইট বন্ধ
ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল সকাল থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। পরে বেলা দেড়টা নাগাদ কুয়াশা কেটে গেলে উড়োজাহাজ চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ সময় বিমানবন্দরে ভোগান্তিতে পড়েন তিন শতাধিক যাত্রী।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়ের ইনচার্জ লোকমান হোসেন বলেন, সকাল নয়টায় বিমানবন্দরের রানওয়ে এলাকায় দৃষ্টিসীমা (ভিজিবিলিটি) ছিল মাত্র ১০০ মিটার। নিয়ম অনুযায়ী, রানওয়েতে দুই হাজার মিটার দৃষ্টিসীমায় ফ্লাইট ওঠানামা করতে পারে। তবে এদিন কোনো ফ্লাইট বাতিল হয়নি।