নয়নজুড়ানো পাখির ছবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
আব্দুস সামাদ আলিমের একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী চলছে গুলশানের এজ গ্যালারিতে। প্রদর্শনীতে পাখির ছবি দেখছেন দর্শনার্থীরা
বাগেরহাটের কটকা অঞ্চলের কাদেরের খাল। চলতি ডিসেম্বরের কোনো এক সকালের প্রথম প্রহরের সূর্যের আলো গাছের পাতা ভেদ করে খালের পানিতে পড়েছে। একটি বড় সাদা বক খালের ওপর ডানা মেলেছে। আরও আট-নয়টি পাখি খালপাড়ে দাঁড়িয়ে। খালের দুই পাড়ে কাদার ওপর দাঁড়িয়ে সুন্দরবনের শ্বাসমূলীয় ছোট ছোট গাছগুলো।
এটি সুন্দরবনে বেড়াতে গিয়ে কেবলই খালি চোখে দেখা দৃশ্য নয়। রোদমাখা খালের ওপর পাখি উড়ে যাওয়ার এই অপরূপ দৃশ্য ফ্রেমে বন্দী করেছেন চিকিৎসক আব্দুস সামাদ আলিম। তাঁর তোলা এমন ৬৫টি প্রজাতির ৮৯টি পাখির ছবি নিয়ে রাজধানীতে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী। সেই প্রদর্শনীতে ঢুকতেই ডান পাশের দেয়ালে বড় করে সাঁটানো আছে কাদেরের খালের ওপর উড়ে যাওয়া পাখির ছবিটি।
রাজধানীর গুলশান–২ নম্বরের এজ গ্যালারিতে আজ শনিবার শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ‘দ্য উইংস অব ভাইব্র্যান্স’ শিরোনামে আব্দুস সামাদের একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। বেলা দুইটায় এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কিউন।
উদ্বোধন শেষে লি জ্যাং কিউন বলেন, ‘বাইরে গেলেই সচরাচর পাখি দেখি। কিন্তু কখনো ভাবিনি পাখি আমাদের জীবনের খুব কাছের। যখন আড়াই বছর আগে আমি ঢাকায় আসি, তখন ছিল করোনার প্রকোপ। তখন কারও সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হতো না। ওই সময় আমি মাঝেমধ্যে পার্কে হাঁটতে যেতাম। তখন আমি কিছু পাখি দেখতাম, যা অন্য কোথাও আগে দেখিনি। আমি পাখির কাছে যেতে চাইতাম। কিন্তু পাখির কাছে যাওয়া সহজ নয়। মুঠোফোনে ছবি তুলতে চাইতাম, সেটাও আসলে সহজ নয়। পাখি খুব দ্রুত বুঝে ফেলে, উড়ে যায়। আমি আসলে খুবই বিস্মিত হয়েছি আব্দুস সামাদের কাজ দেখে। তাঁর এই কাজ সত্যি অপূর্ব।’
আব্দুস সামাদের এই একক প্রদর্শনীতে যে ৬৫টি প্রজাতির পাখির ছবি স্থান পেয়েছে, তার মধ্যে ৫৬টি বাংলাদেশের। বাকিগুলো থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ ও ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে তোলা। দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো ফ্রেমের এসব পাখি যেন জীবন্ত লাগছিল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যানি ভ্যান লিউয়েন বলেন, ঢাকায় সব সময় যানজট, বায়ুদূষণসহ নানা সমস্যা, সেখানে পাখির ছবি দেখা স্বভাবতই উপভোগ্য। তিনি বলেন, ‘আমি পাখি দেখি। ছবি তুলি। এখানে এসে অসংখ্য সুন্দর পাখির ছবি দেখার সুযোগ হলো, যা সত্যিই উপভোগ্য।
’প্রদর্শনী ঘুরতে এসে শিক্ষার্থী রাহিক আল মাখতুম বলেন, ‘আমি এখানে অনেক পাখি দেখলাম, যা আগে দেখিনি। প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবে এখানে এসে ভালো লেগেছে।’
বেলা ২টায় উদ্বোধন হলেও সকাল ১১টা থেকেই দর্শনার্থীদের জন্য প্রদর্শনী উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। রাত আটটা পর্যন্ত প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন দর্শনার্থীরা। আগামীকাল রোববার বেলা ১১টায় প্রদর্শনী শুরু হয়ে শেষ হবে রাত ৮টায়।
আব্দুস সামাদ পেশায় চিকিৎসক হলেও ২০১১ সাল থেকে ছবি তুলছেন। ২০১২ সাল থেকে পাখির ছবি তোলা শুরু করেন তিনি। তখন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তোলা ছবিগুলো নিয়ে তাঁর প্রথম এই একক সোলো বার্ড ফটোগ্রাফি প্রদর্শনী। আব্দুস সামাদ বলেন, ‘প্রথমে অন্যদের পাখির ছবি দেখে আমি উদ্বুদ্ধ হই। যখন ছবি তুলতে গেলাম, দেখি তোলা যায় না। অনেক কষ্টের পরে যখন ভালো একটা ছবি তুলি, তখন অন্য রকম এক আনন্দ হয়। এভাবে ছবি তুলতে তুলতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ি। তারপর দেখলাম, পাখিকে বাঁচাতে হলে প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রকৃতি রক্ষা করা ছাড়া পাখির এই বৈচিত্র্য টিকে থাকবে না।’
প্রদর্শনীতে এসেছিলেন তরুণ লেখক, কবি, গায়ক, আলোকচিত্রী, আবৃত্তিকার ও চিত্রশিল্পীদের জন্য করা প্রতিষ্ঠান পেনসিল ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তৌহিদা হানফী মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন কষ্ট পাই, তখন পাখি হতে চাই। তাই আমাদের পাখির যত্ন নিতে হবে।’