ভালো মানুষেরা এখন আর রাজনীতিতে আসতে চায় না: ওবায়দুল কাদের

রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির (জেপি) ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অধিবেশনে ওবায়দুল কাদের । ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতিতে ভালো মানুষকে আকৃষ্ট না করতে পারার দায় স্বীকার করলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিকেরা রাজনীতিকে ভালো মানুষের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেনি। এই ব্যর্থতার দায় আমরা যারা রাজনীতি করি আমাদের সকলের। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।’

আজ রোববার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির (জেপি) ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অধিবেশনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

পঁচাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরে বাংলাদেশ উল্টো পথে যাত্রা শুরু করেছিল উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিপ্লবের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব শুরু হলো, গণতন্ত্র শৃঙ্খলিত হলো, সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কে দেয়াল উঠতে শুরু করল। তিনি আরও বলেন, জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড, একুশে আগস্টের হত্যাকাণ্ডে দেয়াল উঁচুতে আরও উঁচুতে উঠতে থাকল। কিন্তু কোনো সেতু (ব্রিজ) তৈরি হয়নি।

সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা এক দিনে এক শ সেতুর উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু রাজনীতিতে আমরা কোনো সেতু নির্মাণ করতে পারিনি। রাজনৈতিক কর্ম সম্পর্কটা আমাদের থাকা উচিত ছিল। এভাবে গণতন্ত্র বাঁচতে পারে না। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন। আমাদের দেশে এখানেই সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। কারণ, আমরা নষ্ট রাজনীতির কাছে বারবার আত্মসমর্পণ করি।’

এ সময় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নষ্ট রাজনীতি নষ্ট মানুষের জন্ম দেয়, নষ্ট রাজনীতিকেরা নষ্ট রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রাখে। বাংলাদেশের অবস্থা হয়েছে ঠিক তা–ই। এ তো বিভক্তি রাজনীতি! এর জন্য তো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি।

দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রাজনীতিতে ভালো মানুষের অভাব সম্পর্কে আরও বলেন, ‘আজকে রাজনীতিতে ভালো মানুষেরা আসতে চায় না। আজকে ভালো মানুষেরা, শিক্ষিত মানুষেরা, সৎ মানুষেরা, যোগ্য মানুষেরা রাজনীতির ধারেকাছেও নেই। আমরা যারা রাজনীতি করি, এই ব্যর্থতা, দায় আমাদের। এটা স্বীকার করতেই হবে।’

ছাত্ররাজনীতির সুনামের ধারা হারিয়ে গেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে একই অবস্থা আমাদের ছাত্ররাজনীতিতেও। ছাত্ররাজনীতি সুনামের ধারায় নেই। এখানে যাঁরা আছেন (৭০–এর দশকের সাবেক ছাত্রনেতা)। ছাত্ররাজনীতি করেছেন, সেই ধারাটি আজ কোথায় হারিয়ে গেল?’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি মনে করি, খারাপ লোকের হাতে রাজনীতি থাকলে দেশটা খারাপ হবে। খারাপ লোকদের হাতে রাজনীতি থাকলে খারাপ লোকেরা মন্ত্রী হবে, এমপি হবে দেশ চালাবে, এতে দেশের ভালো হবে না। ভালো লোকদের রাজনীতিতে আনতে হবে, মেধাবীদের রাজনীতিতে আনতে হবে, সৎ লোকদের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে। না হলে রাজনীতি মেধাশূন্য হয়ে যাবে। চরিত্রবানদের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে, না হলে রাজনীতি চরিত্রহীন হয়ে যাবে। এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।’

জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমির হোসেন আমু, ওয়ার্কার্স পাটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক পাটির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান প্রমুখ।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.