নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে

মায়ের কোলে নেবুলাইজ করা হচ্ছে মুক্তা মণিকে

মুক্তা মণি মাসখানেক ধরে সর্দি-কাশি-জ্বরে ভুগছে। বিভিন্নজনের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ানোর পরও লাভ হয়নি। শেষমেশ সপ্তাহখানেক আগে রাজধানীর শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। আজ রোববার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তার মায়ের কোলে মুক্তার নেবুলাইজ হচ্ছিল।

নেবুলাইজারের মাস্কটি কোনোভাবেই পছন্দ হচ্ছিল না পাঁচ মাসের ছোট্ট শিশুটির। চোখমুখ কুঁচকে ছিল তার। মা আঁখি মণি জানালেন, ঠান্ডাজনিত রোগে বেশ কষ্ট পাচ্ছিল বাচ্চাটা। তবে আগের চেয়ে সে এখন ভালো।

এবার রাজধানীসহ সারা দেশে জেঁকে বসেছে কনকনে শীত। অতিরিক্ত শীতে শিশুদের অসুস্থতার হার বেশি। শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত অসুখ নিয়ে হাসপাতালগুলোতেও ভিড় বাড়ে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটেও শীতজনিত রোগ নিয়ে শিশুরা ভর্তি হচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার তাঁরা বেশি রোগী দেখছেন।

শিশুদের সুস্থ রাখতে অভিভাবকদের কিছু পরামর্শ দেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান। সেগুলো হলো শিশুকে পরিষ্কার গরম কাপড় পরিয়ে রাখা, ঘর বদ্ধ না রেখে আলো-বাতাসের প্রবাহ রাখা এবং ঠান্ডার মধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে অহেতুক ঘোরাঘুরি না করা।

এ হাসপাতালের নিউমোনিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে রাজধানীর আদাবর থেকে আসা মুক্তা মণিকে। এ ওয়ার্ডের ২০টি শয্যার সব কটিই পূর্ণ। বেশির ভাগ রোগীকেই অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। রাজধানীর শিশু ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকেও রোগী আসছে এখানে।

কথা হয় ফরিদপুর থেকে আসা মালিহা আক্তারের সঙ্গে। সাড়ে তিন মাস বয়সী ছেলে আহমাদুল্লাহকে পাঁচ দিন আগে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। ডায়রিয়া ও সর্দি-জ্বর ছিল ছেলের। ডায়রিয়া কমলেও শ্বাসকষ্ট কমেনি।

মালিহা আক্তার বলেন, প্রতিদিন তিন বেলা নেবুলাইজ করতে হচ্ছে। আহমাদুল্লাহর উল্টো দিকের শয্যায় ছোট্ট রুশবাকে নিয়ে বসে ছিলেন নানি হাসনা বেগম। ছয় মাসের এই শিশুর নাকে অক্সিজেনের নল লাগানো। হাসনা বলেন, রাজধানীর আরেকটি হাসপাতালে ২০ দিন ভর্তি ছিল নাতনি। শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় শিশু হাসপাতালে এসেছেন তাঁরা।

এবার রাজধানীসহ সারা দেশে জেঁকে বসেছে কনকনে শীত। অতিরিক্ত শীতে শিশুদের অসুস্থতার হার বেশি। শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত অসুখ নিয়ে হাসপাতালগুলোতেও ভিড় বাড়ে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে নিউমোনিয়া নিয়ে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে আজ রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২০ শিশু ভর্তি হয়েছে। রোববার সকাল পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০২। গত ডিসেম্বরে ভর্তি ছিল ৪৩৩ শিশু। এ ছাড়া ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি আছে ২৪ শিশু। গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয় ১২ শিশু।

ফরিদপুর থেকে সাড়ে তিন মাস বয়সী ছেলে আহমাদুল্লাহকে নিয়ে ঢাকায় এসেছেন মালিহা আক্তার
ফরিদপুর থেকে সাড়ে তিন মাস বয়সী ছেলে আহমাদুল্লাহকে নিয়ে ঢাকায় এসেছেন মালিহা আক্তার

শিশু হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান বলেন, অন্যান্য বছর শীত ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এবার হঠাৎ টানা বেশ কিছুদিন কনকনে শীত পড়ছে, যা অনেকের কাছেই অসহনীয় বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের কষ্ট বেশি হচ্ছে। শিশুদের সাবধানে রাখার পরামর্শ দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, চিন্তার কারণ নেই। সর্দি লাগলে নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে নজর রাখতে হবে। শিশুর বুক বেশি দেবে গেলে, ঘন ঘন শ্বাস নিলে ও খিঁচুনি উঠলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পাড়া-মহল্লার ফার্মেসি থেকে ওষুধ না খাওয়ানোর ওপর জোর দেন তিনি।

শিশুদের সুস্থ রাখতে অভিভাবকদের আরও কিছু পরামর্শ দেন মো. কামরুজ্জামান। সেগুলো হলো শিশুকে পরিষ্কার গরম কাপড় পরিয়ে রাখা, ঘর বদ্ধ না রেখে আলো-বাতাসের প্রবাহ রাখা এবং ঠান্ডার মধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে অহেতুক ঘোরাঘুরি না করা।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.