আওয়ামী লীগ নেতারা সিন্দুকে, বস্তায়, ট্রাংকে টাকা রাখেন: নজরুল ইসলাম খান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা ব্যাংকে টাকা বেশি রাখেন না। তাঁরা টাকা রাখেন সিন্দুকের মধ্যে, খাটের নিচে, বাড়ির পেছনে, বস্তায় বস্তায়, ট্রাংকে ট্রাংকে।

শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সিলেট নগরের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ থেকে সুরমা মার্কেট এলাকা অভিমুখে এক পদযাত্রা কর্মসূচি শুরুর আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, গবেষণা সংস্থাগুলো বলছে, কোভিডের মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ১২ হাজার নতুন কোটিপতি হয়েছে। এর বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ অতিদরিদ্র হয়েছে। সরকার কথায় কথায় বলে, তারা উন্নয়ন করেছে। আসলে তারা শুধু ১২ হাজার কোটিপতি মানুষের সরকার। তারা ওই সাড়ে তিন কোটি মানুষের সরকার নয়। এই সাড়ে তিন কোটি মানুষ এখন পরিবর্তন চায় শুধু বেঁচে থাকার জন্য।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেট মহানগর বিএনপি এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, কয়েক দিন আগে উপনির্বাচন হলো। শতকরা ১৬ ভাগ ভোট পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, শতকরা ৫৪ ভাগ লোক নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি। এটা সরকারি হিসাব। আসল হিসাবে ৫ শতাংশ ভোটও পড়েনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘যখন আমরা শান্তি পদযাত্রা করি, তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটা নাকি মরণযাত্রা! মরণ কার, এটা পরিষ্কার করে বলেননি। আমার শুধু প্রশ্ন, অন্য কথা মনে না হয়ে মরণের কথা মনে হলো কেন আপনার? ভয় পাচ্ছেন? আরেক বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বললেন, পালিয়ে গিয়ে তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাড়িতে আশ্রয় নেবেন। রাজি আছি আমরা, আলহামদুলিল্লাহ। আশ্রয় দিতে তো অসুবিধা নেই, আমরা তো মারপিট করতে চাই না।’

সিলেট মহানগর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত পদযাত্রায় দলটির নেতাকর্মীরা
সিলেট মহানগর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত পদযাত্রায় দলটির নেতাকর্মীরা

স্থানীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশাপাশি মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতারা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে এসে কর্মসূচিতে যোগ দেন। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পদযাত্রা নগরের চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার ও কোর্ট পয়েন্ট হয়ে সুরমা মার্কেট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পদযাত্রায় হাজারো নেতা-কর্মী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অংশ নেন। তাঁরা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেন।

নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘আজকে যে ক্ষমতাসীন দল, তাদের কাউন্সিল যেদিন, সেদিন আমাদের একটা কর্মসূচি ছিল। আমি দলের পক্ষ থেকে প্রেস কনফারেন্স করে আমাদের কর্মসূচি পিছিয়ে দিয়েছিলাম। এটা একটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি। কিন্তু এখন যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা কোনো সংস্কৃতির ধার ধারেন না। ঠিক আমরা যেদিন কোনো কর্মসূচি দেব, তারা (আওয়ামী লীগ) করে শান্তি সমাবেশ। আর এ নামে তারা অশান্তির সৃষ্টি করে। প্রতিটা কর্মসূচিতে আমাদের নেতা-কর্মীকে আক্রমণ করা হয়, তাঁদের মারপিট করা হয়, গুলি করা হয়, আবার তাঁদের বিরুদ্ধেই মামলা দেওয়া হয়, তাঁদেরই গ্রেপ্তার করা হয়।’

পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী। এতে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমেদ, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী। সমাবেশে ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশের প্রতিটি জেলায় পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখন জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছে শুধু একটা পরিবর্তনের আশায়।

পদযাত্রা কর্মসূচিতে সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.