নারী স্বাধীনতাকে পুরুষতন্ত্র হুমকি ভাবে কেন?

নারীবাদ প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে নারী স্বাধীনতা নিশ্চিতে সংগ্রাম করেছে। অনেক ক্ষেত্রে সফল হলেও দীর্ঘ সংগ্রামের এই ইতিহাস তৃতীয় বিশ্বে পুরুষতন্ত্রে বিশ্বাসী নারী-পুরুষকে নারী স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড় করাতে অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে। আজও নারীদের ক্ষেত্রে স্বাধীনতার সমার্থক হিসেবে ‘বেপরোয়া’ শব্দের হরহামেশা ব্যবহার দেখবেন,যদিও পুরুষের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা মানে পুরুষত্ব। পোশাক নির্বাচন থেকে শুরু করে পেশা নির্বাচনসহ নানা ক্ষেত্রে আজও নারী নিজের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না। পুরুষ কি পরবে তা নিয়ে কেউ কথা না বললেও নারী কি পরবে বা করবে তা ঠিক করে দেয় পুরুষতন্ত্র।

নারী স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন করে ক্ষেত্র বিশেষে রাষ্ট্র আইন করে নারীর পোশাক ঠিক করার দায়িত্ব নেয়! পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া এমন সব অবরোধকে নারীর চয়েজ হিসেবে জাহির করা হয়। বংশানুক্রমিকভাবে দেখে আসা বৈষম্যে অভ্যস্ত ও বিভ্রান্ত নারীও ভাবে এসব তাঁর চয়েজ। নারীর মনে এই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পুরুষতন্ত্র ব্যবহার করে পরিবারকে। নারীর নিজের পরিবার কিভাবে নিজের বিরুদ্ধে যুগ যুগ ধরে ষড়যন্ত্র করে চলেছে খুব কম নারীই তা বুঝতে পারেন,কারণ পরিবারের কর্তা রূপে অধিষ্ঠিত পুরুষকে নারী পিতা, ভাই কিংবা পার্টনার রূপে জানেন।

নিকটজন হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পুরুষ দীর্ঘ সময় ধরে নারীদের অধিকার খর্ব করে নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখছে। কর্তৃত্ববাদী পুরুষ নিজের ডোমিন্যান্সের জায়গা ছেড়ে দিয়ে নারীদের সমকক্ষ হতে চায় না। বরং সমতার পক্ষে নারীবাদের অবস্থানকে বিতর্কিত করতে নারীবাদকে পুরুষ বিরোধী বলে অপপ্রচার করতে থাকে। যে নারীবাদ নারীকে ভোটাধিকার, শিক্ষা-কর্মসংস্থানের অধিকার ও স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার দিতে লড়ছে, তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নারী স্বাধীনতাকে নারী নির্যাতন বৃদ্ধি ও নিরাপত্তাহীনতার জন্য দায়ী করে। যখন কিনা সময়ের ব্যবধানে নারী আজ অধিকার সচেতন বলেই যুগ যুগ ধরে চলে আসা নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করছে,যা দেরিতে হলেও আমাদের কানে এসে পৌঁছাচ্ছে।

নারীর এই প্রতিবাদ পুরুষতন্ত্র হুমকি হিসেবে দেখে। নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে ট্রিট করে নিয়ন্ত্রণ করবার ধারণা থেকে যোজন দূরে ছিটকে পড়ার ভয় চেপে বসে তাদের। তাই তো নারীবাদ নারীকে শিক্ষিত, স্বাবলম্বী হওয়ার অধিকার দিলেও, ঘরের কাজের বোঝা কমাতে পারেনি। বাচ্চাদের দেখাশোনা থেকে শুরু করে ঘরের সব কাজ নারীদের উপর চাপিয়ে দিয়ে ক্ষান্ত হয় না পুরুষ, পরিবারে জারি রাখতে চায় তার কর্তার স্থান।

দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততায় পুরুষ নারীকে চায় দাসী হিসেবে। অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রে নারীদের জীবন বিষিয়ে তুলতে অতিরিক্ত সময় অফিসে আটকে রাখার পাঁয়তারা খোঁজে পুরুষতন্ত্র। নারীর উপর সব দায় দায়িত্ব তুলে দিয়ে নারীকেই আবার ঘরে-বাইরে অযোগ্য প্রমাণে ব্যস্ত পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বয়ং রাষ্ট্রযন্ত্রও নির্বিকার।প্রতিবাদ শুধুমাত্র বুলিতে সীমাবদ্ধ না রেখে, একাডেমিকভাবে নাগরিকদের লিঙ্গীয় সমতায় সুশিক্ষিত করতে হবে রাষ্ট্রের। সঠিক আইন প্রণয়ন করে তার বাস্তবায়নে সরকার এগিয়ে এলেই তবে নারীরা পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বাঁচার স্বাদ পাবে।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.