রংপুর অঞ্চলে ৩ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে নদ-নদীর পানি  

ভারতের উত্তর সিকিমে ভারী বর্ষণসহ উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রধান নদ নদীর পানি ফের তৃতীয় দফায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শতশত ঘরবাড়ী বিলীন হয়েছে ।দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট। পানিবন্দি পরিবারগুলো দুর্বিষহ জীবন যাপন।

এমনি দুর্বিষহ চিত্র দেখা যায় ও রংপুরের গঙ্গাচড়ার লালমিনরহাট নীলফামারী ও গাইবান্ধার, কুড়িগ্রাম সুন্দরগঞ্জে নদী পাড়ের মানুষদের। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নতুন নতুন এলাকা। এতে চরম দূর্ভোগে পড়েছে হাজারও বানভাসি মানুষ ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রংপুরের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, শনিবার (৬ জুলাই) সকাল ৬টায় কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের নুনখাওয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ২৬ দশমিক ৭৩ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ২৬ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার দশমিক ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

একই দিন সকাল ৬টায় ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ২৩ দশমিক ৯৮ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার দশমিক ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ২৩ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার ধরা হয়। এছাড়া ঘাঘট নদীর গাইবান্ধা পয়েন্টে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার দশমিক ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

পাউবো বলছে, শনিবার সকাল ৬টায় রংপুরের যমুনেশ্বরী নদীর বদরগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। একই সময়ে ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৪ সেন্টিমিটার নিচ, রংপুরে ঘাঘটের জাফরগঞ্জ পয়েন্টে ২ দশমিক ৬৭ সেন্টিমিটার নিচ, ইসলামপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৫৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

এদিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পানির চাপ মোকাবিলায় ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। অব্যাহত বৃষ্টিপাত আর শুষ্ক মৌসুমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রভাব পড়েছে সাম্প্রতিক বন্যায়। নদীর পাড় ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে এবার লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা শহর রক্ষায় তৈরি করা চন্ডিমারী বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। এতে তিস্তা নদীর গতিপথ উল্টো দিকে চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

শনিবার (৬ জুলাই) সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার দশমিক ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার দশমিক ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানির প্রবাহ  রের্কড করা হয়। অর্থাৎ তিনঘণ্টায় পানি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

এদিন সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ২৮ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার দশমিক ৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার দশমিক ৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।

এদিকে প্রতিদিনের বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধির ফলে রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার সকল নদ-নদীর পানি পাশাপাশি বিলের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। একই সঙ্গে ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে কৃষকের শাকসবজি, বীজতলা ও রোপা আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, উজানের ঢলে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানির চাপ সামলাতে ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি হয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।

এদিকে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, অসময়ের বন্যা ও ভাঙনে প্রতিবছর এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তার গর্ভে চলে যায়। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য নদী খনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প নেই। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে আজ শনিবার দুপুরে তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে সমাবেশ করবেন বলেও জানান তিনি।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর জেলায় ১৩২ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ শনিবার রংপুর বিভাগসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.