এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হারলো বাংলাদেশ
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ম্যাচে জেসন রয়ের ১২তম শতক ও অধিনায়ক জস বাটলারের ঝড়ো ফিফটি এবং মঈন আলি ও স্যাম কারানের ক্যামিওতে ৩২৬ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। ৩২৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৯৪ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। ১৩২ রানের হারে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জয় করে নেয় ইংল্যান্ড।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিং নেয় বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশি দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামকে দেখেশুনে খেলতে থাকে ইংলিশ দুই ওপেনার। তবে ইনিংসের সপ্তম ওভারে তাসকিন আহমেদের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন সল্ট। স্লিপে থাকা শান্ত দুর্দান্তভাবে লুফে নেন ক্যাচটি। মাত্র ৭ রান করে আইট হন সল্ট।
সল্টের বিদায়ের পর প্রতিরোধ গড়েন তোলেন রয় ও মালান। দুইজনের জুটিতে আসে ৫৮ রান। দলীয় ৮৩ রানের মাথায় মিরাজের বলে আউট হন মালান। ব্যক্তিগত ১১ রান করে আউট হন এই ইংলিশ ব্যাটার। মালানের বিদায়ে ক্রিজে এসে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি আরেক ইংলিশ ব্যাটার জেমস ভিন্স। ব্যক্তিগত ৫ রান করে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ তুলে তাইজুল ইসলামের শিকার হন তিনি।
৯৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দল যখন বিপর্যয়ে ঠিক তখনই অধিনায়ক জস বাটলারকে সঙ্গী করে লড়ে যান রয়। ম্যাচের ৩২তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের বল লেগ সাইডে ঠেলে দিয়েই ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন রয়। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন বাটলার। দু’জনের বল প্রতি রান তোলার জুটিতে বড় সংগ্রহের পথে ছুটতে থাকা ইংলিশদের রানের গতিতে লাগাম টানেন সাকিব। রয়-বাটলারের ১০৯ রানের জুটি ভাঙেন এই নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। ৩৬তম ওভারের চতুর্থ বলে রয়কে আউট করেন সাকিব।
এর পরের ওভারে পেসার তাসকিন আহমেদের বলে সাকিবের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে মাঠ ছাড়েন জ্যাকস। ব্যক্তিগত ১ রান করে আউট হন জ্যাকস। তবে অলরাউন্ডার মঈন আলিকে সঙ্গী করে রানের গতি বাড়াতে থাকেন বাটলার। ৫টি চার ও ২টি বিশাল ছক্কার সাহায্যে ৬৪ বলে ৭৪ রানের এক বিশাল ইনিংস উপহার দেন তিনি। মিরাজের দুর্দান্ত কট এন্ড বোল্ডের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন এই ইংলিশ অধিনায়ক।
এরপর বাংলাদেশি বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন মঈন আলি। তাসকিন আহমেদের বলে আউট হওয়ার আগে ৩৫ বলে ৪২ রানের এক ক্যামিও খেলেন এই অলরাউন্ডার। ফিনিশিংটাও দুর্দান্ত পেয়েছে ইংলিশরা। ১৯ বলে ২টি চার ও ৩ ছক্কায় ৩৩ রান সংগ্রহ করেন স্যাম কারেন। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩২৬ রান তুলতে সক্ষম হয় ইংলিশরা। বাংলাদেশ দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। ২টি উইকেট নেন মিরাজ এবং ১টি করে উইকেট পান সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম।
বাঁচা-মরার ম্যাচে রেকর্ড গড়ে জিততে হবে এমন লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে শুরুতেই তিন উইকেট হারিয়ে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ওভারে বল করতে আসেন স্যাম কারান। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই জেসন রয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরেন লিটন। ক্রিজে এসে কারানের সুইং বোঝার আগেই গোল্ডেন ডাক মারেন শান্ত। খোঁচা মেরে জস বাটলারের হাতে ক্যাচ তুলে আউট হন তিনি। এরপর ক্রিজে আসেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিক। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাটে লেগে বল চলে যায় বাটলারের গ্লাভসে। আম্পায়ার আউটের সাড়া না দিলেও তাৎক্ষণিক রিভিউ নেন ইংলিশ অধিনায়ক বাটলার। থার্ড আম্পায়ারের ডিসিশনে আউট হন মুশফিক। ব্যক্তিগত ৪ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরেন এই ব্যাটার।
৯ রানের মধ্যে টপ অর্ডারের ৩ ব্যাটার আউট হলে বড় হারের লজ্জার হাতছানি ছিল টাইগারদের সামনে। তবে চতুর্থ উইকেটে ১১১ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়ে দলের সম্মান কিছুটা হলেও রক্ষা করেন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। রান রেট ৮’র উপরে উঠতে শুরু করলে হাত খুলে মারা শুরু করেন সাকিব। তার সাথে যোগ দেন তামিমও। কিন্তু দলীয় ৮৮ রানে মঈন আলিকে ওয়াইড লং অফের উপর দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন তামিম। ধরা পড়েন জেমস ভিন্সের হাতে। আউট হবার আগে ৬৫ বলে ৩৫ রান করেন তামিম ইকবাল। যেখানে ছিল ৪টি বাউন্ডারি।
তামিমের আউট হবার পর হাত খুলে মারা শুরু করেন সাকিব। ৫৯ বলেই তুলে নেন তার ক্যারিয়ারের ৫১তম হাফ-সেঞ্চুরি। ৬৯ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৫৮ রান করা সাকিব নিজের সহজাত খেলার পাশাপাশি পড়েছিলেন রানের চাপে। তাই তো আদিল রশিদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বিপদে পড়েন এই অলরাউন্ডার। মিড অফে ধরা পড়েন স্যাম কারানের হাতে। এরপর শুরু হয় বাংলাদেশ ব্যাটারদের আশা যাওয়ার মিছিল।
মাহমুদউল্লাহ ৩২, আফিফ ২৩, মিরাজ ৭, তাসকিন ২১, তাইজুল ১ রান করেন। শেষ পর্যন্ত ৪৪ দশমিক ৪ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। ইংলিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট পান আদিল রশিদ ও স্যাম কারান। এছাড়াও, ১টি উইকেট পান মঈন আলি।